সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সপ্তাহখানেক ধরেই বাতাসে বহিছে প্রেম। নয়নে লেগেছে নেশা। ফুল ফটুক আর নাই ফুটুক, তরুণ হৃদয়ে বসন্ত এসে গিয়েছে। এদিকে প্রকৃতিতেও লেগেছে রঙ। শীতের ঝরাপাতাকে বিদায় দিয়ে সে ডাক পাঠিয়েছে পলাশের মাসকে। কেউ অবশ্য তাকে বলে ফাল্গুন। কিন্তু তরুণ হৃদয়ের জলোচ্ছ্বাস জানে, এ একান্তই প্রেমিকের সর্বনাশ। আজ সেই চোখে চোখ রেখে সর্বনাশকে দেখে নেওয়ার দিন। কিন্তু তার তো আলাদা দিনক্ষণ হয় না। প্রেম কি আর পঞ্জিকা মেনে চলে! তবু যুগের হাওয়া বলছে, আজকের দিনটাই শুধু প্রেমের জন্যই তুলে রাখা।
আসলে কর্পোরেট বাণিজ্যব্যবস্থা যেভাবে ইতিহাসের আলোটুকুর সফল বিপণন করেছে, তাতে এটাই দস্তুর। আর এ সবের নেপথ্যে থেকে গিয়েছেন জনৈক ভ্যালেন্টাইন সাহেব।
তা কে ছিলেন এই সেন্ট ভ্যালেনটাইন?
অন্তত জনা তিনেক ভ্যালেনটাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। ঠিক কার নামে এই দিনের উদযাপন শুরু তা স্পষ্ট নয়। তবে এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি।
ফিরে যাওয়া যাক তৃতীয় শতকের রোমে। সিংহাসনে তখন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস আসীন। রাজা যুদ্ধবাজ। তাই তাঁর মনে হল, সৈনিকদের সিঙ্গল থাকাই ভাল। প্রেম কিংবা বৈবাহিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেই যুদ্ধের দফারফা। অ্যাগ্রেসন তলানিতে। সেইমতো জারি হল ফতোয়া। তরুণ যুবকদের বিয়েই আটকে দিলেন তিনি। কেননা সেনায় যোগ দেন যুবারাই। এ খবর কানে গিয়েছিল বিশপ ভ্যালেনটাইনের। প্রেমের এই অপমৃত্যু তিনি সহ্য করতে পারেননি। গোপনে যুবাদের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। যেইনা এ কথা কানে গেল রাজার, অমনি বন্দি করে আনা হল বিশপকে। অতঃপর মৃত্যুদণ্ড। প্রেমের জন্য যিনি প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁকে স্মরণ করেই শুরু হল ভ্যালেনটাইনস ডে পালন।
[ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে প্রিয়জনকে দিন একটু অন্য ধরনের উপহার]
অবশ্য অন্য কাহিনিও প্রচলিত আছে। বিশপ ভ্যালেনটাইন নাকি জেল থেকে বন্দিদের পালাতে সাহায্য করতেন। কেননা বন্দিশালায় চলত অকথ্য অত্যাচার। এ খবর চাউর হতেই খুন হয়ে যান ওই বিশপ।
অন্য একটি কিংবদন্তি জানায়, ভ্যলেনটাইন সাহেব নিজেই জেলবন্দি ছিলেন কোনও কারণে। সেই সময় সুন্দরী জেলার কন্যার প্রেমে পড়ে যান তিনি। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড যাঁর কপালে ঝুলছে, তাঁর প্রেমের পরিণতিও অধরা। মৃত্যুর ঠিক আগে তিনি তাঁর প্রেমিকাকে একটি চিঠি লেখেন। তলায় লিখেছিলেন, ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
এখন এই সব গল্প একজন ভ্যালেনটাইন সাহেবকে কেন্দ্র করে, নাকি এঁরা আলাদা মানুষ ছিলেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ইতিহাস। একসময় রোমে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই সময়টাকে উর্বরতার দিন হিসেবে পালন করা হত। অর্থাৎ নয়া কোনও সূচনার সময়। ঊষরতাকে বিদায় দিয়ে তারুণ্যকে আহ্বান জানানোর রীতি ছিল সে যুগে। সে ছাপ বসন্ত উৎসবের মধ্যেও আছে। শীতের রূক্ষতা অবসানে নতুন করে রঙে সেজে ওঠার যে ডাক প্রকৃতিতে, তাই চারিয়ে গিয়েছিল মানুষের ব্যবহারিক জীবনেও। পঞ্চদশ শতক থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকেই প্রেমের দিনের শিরোপা দেওয়া হয়। কিংবদন্তির পাশাপাশি সম সময়ের কবিতাতেও উঠে এসেছিল ভ্যালেনটাইনের কথা।
[‘ভ্যালেন্টাইনস’ সপ্তাহে বিশেষ মেনু সাজিয়ে হাজির শহরের রেস্তরাঁগুলি]
এ তো গেল ইতিহাস। এতদিনে সময় বদলেছে। পরিবর্তনের অঙ্গসজ্জা লেগেছে সময়ের চোখে-ঠোঁটে-গালে। প্রেম তথা জীবনের উর্বরতাকে উদযাপন করার যে রীতি ছিল তাতে এসে মিশেছে নিখুঁত কর্পোরেট বাণিজ্য। ফলে রোজ ডে থেকে চকোলেট ডে, টেডি ডে-র মতো দিনগুলোও জুড়ে গিয়েছে ভ্যালেনটাইনের সঙ্গে। কিন্তু প্রেমের জোয়ারে অর্থনীতির তত্ত্বের কচকচানি বৃথা। অতএব ওসব তোলা থাক সমালোচকদের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ার ভরে উঠুর বিরুদ্ধতায়। বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি দিয়ে হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়া যুগলেরা শুধু জানে, আজ দুজনে মন্দ হলে মন্দ কী!
[কোন দুই রাশি একে অপরের ‘সোলমেট’, জ্যোতিষশাস্ত্রর বিচারে মিলিয়ে নিন]
The post প্রেম তো পঞ্জিকা মানে না, তবে কেন ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন? appeared first on Sangbad Pratidin.