সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মনে পড়ে ‘সোনার কেল্লা’? ফেলুদাকে জরিপ করে নিতে সিধু জ্যাঠার প্রশ্ন ছিল, উইলিয়াম জেমস হার্শেল কে? উত্তরে প্রদোষ মিত্র জানিয়েছিলেন, আঙুলের ছাপ যে অপরাধী ধরার একটা উপায় হতে পারে, তা এই ভদ্রলোকই প্রথম হদিশ দিয়েছিলেন। কেবল অপরাধী ধরাই তো নয়, আজদের দিনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’-এর (Fingerprint) গুরুত্ব কাউকে বলে দিতে হবে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, কারও আঙুলের ছাপই নেই! এমনও সম্ভব? হ্যাঁ, বাংলাদেশেই (Bangladesh) রয়েছে এমন পরিবার যেখানে তিন পুরুষ ধরে কারও হাতে ও পায়ে কোনও আঙুলের ছাপ নেই!
সেই পরিবারেরই নবীন সদস্য অপু। বয়স ২২। তাঁর ঠাকুরদার প্রজন্ম থেকেই তাঁরা বিরল অ্যাডেরম্যাটোলফিয়ায় আক্রান্ত। এর ফলে আঙুল তো বটেই, গোড়ালি, পায়ের পাতা কোত্থাও কোনও রেখা নেই। রাজশাহির বাসিন্দা অপু বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, তাঁর ঠাকুরদার আমলে এটা কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর ফলে নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে চালু হয় ন্যাশনাল আইডি কার্ড। অপুর বাবা অমলবাবুর কার্ড কী করে ইস্যু করা হবে ভেবে পাচ্ছিলেন না সরকারি অফিসাররা। শেষ পর্যন্ত কার্ড দেওয়া হয় বটে, তবে তাতে গোটা গোটা করে লেখা ‘নো ফিঙ্গারপ্রিন্ট’।
[আরও পড়ুন: OMG! প্রেমিকের গানের তালে তাল মেলাতে গিয়ে সাধের চুল পোড়ালেন গায়িকা, ভাইরাল ভিডিও]
২০১০ সালে পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে যায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট। ব্যস। সমস্যা আরও বাড়ে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাসপোর্ট জোগাড় হয় বটে। তবে সেটা ব্যবহার করতে দ্বিধা হয় অমলের। যদি কোনও সমস্যায় পড়তে হয় বিমানবন্দরে। একই অবস্থা লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও। লাইসেন্সের রশিদ দেখিয়েও কার্ড না থাকায় বেশ কয়েকবার দিতে হয়েছে জরিমানা। সমস্যা সিম কার্ডের ক্ষেত্রেও। অপুর মায়ের নামে সিম ইস্যু করে তা ব্যবহার করেন পরিবারের বাকিরা।
বাবার মতোই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অপুকেও। রীতিমতো অসহায় গলায় বলছেন অপু, ‘‘লোকে বলছে, কিছুতেই সমস্যা না মিটলে আদালতে যেতে। দেখি, এবার সেটাই করতে হবে।’’ বিদেশে ঘুরতে যেতে খুব ইচ্ছে করে বলে জানাচ্ছেন অমল। তাঁর এখন এটাই স্বপ্ন। কিন্তু পাসপোর্টটা একদম ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত তা যে সম্ভব নয়। অসহায় অমল জানাচ্ছেন, ‘‘কী যে করব? এটা তো আমার ইচ্ছেতে হয়নি। বংশের ধারায় পেয়েছি। কিন্তু লোককে কে বোঝাবে?’’