সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ বছরের পুজোটা ভালো কাটবে অনেকেরই। আবার পুরনো আনন্দে ফিরতে পারবেন নেতারা। গরু, কয়লা, শিক্ষার মতো রাজ্যের একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। দীর্ঘ কারাবাসও হয়েছে তাঁদের। তবে কেউ কেউ সেই গরাদের জাল কেটে বেরিয়ে আসতেও সক্ষম হয়েছেন। এই তালিকায় শেষতম সংযোজন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। গরু পাচার মামলায় ইডি ও সিবিআই - দুউ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মামলাতেই জামিন পেয়েছেন তিনি। জেলমুক্তি সময়ের অপেক্ষা। ফলে এবারের পুজোটা নিজের বাড়িতেই কাটাতে পারবেন কেষ্ট। তাঁর মেয়েও এবার পুজোয় বাড়িতে থাকবেন। এমনই আরও কয়েকজন হেভিওয়েটের ভাগ্যে এবার শিকে ছিঁড়েছে। কিন্তু এখনও কারাবন্দি বেশ কয়েকজন। প্রাক্তন দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সেই তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। দেখে নেওয়া যাক, এবছর কাদের জেলমুক্তি ঘটল, কারাই বা রয়ে গেলেন কারাগারে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় দু বছর আগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা তাঁকে 'ষড়যন্ত্রের মাথা' বলে চিহ্নিত করেছিলেন। ঠিক ২৩ মাস পর তাঁর জামিন হয় সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ। পরেরদিন অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর জেল থেকে বেরিয়ে মানিকের প্রথম উক্তি ছিল 'সত্যমেব জয়তে'। অর্থাৎ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আরও একজন জামিনে মুক্ত হলেন। এর আগে গত বছর এভাবেই কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।
২৩ মাস পর জেলমুক্ত মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি।
এদিকে, চলতি মাসের ১০ তারিখই অনুব্রতকন্যা সুকন্যা মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করেছিল দিল্লি হাই কোর্ট। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। টানা ১৮ মাস তিহাড় জেলে বন্দি থাকার পর অবশেষে জামিন পান সুকন্যা। আর তার দিন দশেক পরই তাঁর বাবাও জেলমুক্ত হলেন। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুব্রতর জামিন মঞ্জুর করল। সসম্মানে এবার বীরভূমে, নিজেদের গড়ে ফিরতে পারবেন পিতা-পুত্রী।
বাবার সঙ্গে অনুব্রতকন্যা সুকন্যা মণ্ডল। ফাইল ছবি।
এ তো গেল কারামুক্ত 'নায়ক'দের তালিকা। এখনও জেলের ভিতরে রয়েছেন আরও অনেক হেভিওয়েট। সেই তালিকায় প্রথমেই মনে পড়ছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
ফটোশুটে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে তাঁরা জেলবন্দি। এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন দুজন। বয়সজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়েও জামিন মেলেনি পার্থর। তাঁদের প্রায় পাশাপাশি সেলেই রয়েছেন রাজ্যের আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রেশন দুর্নীতি মামলায় গত বছর তিনি ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন।
রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ফাইল ছবি।
এছাড়া এই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন, সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান। রেশন দুর্নীতি মামলাতেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হামলার মুখে পড়ে ইডি। তার পর দীর্ঘ লুকোচুরির পর অবশেষে পুলিশই তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। পরে ইডিও তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আপাতত শাহজাহানের ঠাঁই বসিরহাট সংশোধনাগারে। এবছর পুজোটা তাঁদের গরাদের অন্ধকারেই কাটাতে হবে।