সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুই হুজুরের গপ্পো কি তবে শেষ? হয়তো তাই। নাহলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) আর্জেন্টাইন মহাতারকার সঙ্গে শত্রুতা-লড়াই প্রসঙ্গে বলবেন কেন, ”দ্য রাইভালরি বিটুইন আস ইজ ওভার।” আমাদের মধ্যে শত্রুতা, লড়াইয়ের অবসান।
পর্তুগিজ মহাতারকা ঘোষণাই করে দিলেন, তাঁদের মধ্যে সব যুদ্ধ শেষ।
সিআর সেভেনের এমন ঘোষণা শুনে অনেকেই হয়তো বলবেন, তবে কি আত্মসমর্পণ করে ফেললেন রোনাল্ডো? এতদিন তো তাঁর মুখে এমন মন্তব্য শোনা যায়নি। তাহলে হঠাৎ কী এমন ঘটল, যার জন্য সিআর সেভেন-কে এমন কথা বলতে হল? দিনকয়েক আগে মেসি বলেছিলেন, ”কেরিয়ারের এই পর্যায়ে পৌঁছে আমাকে আর এই লড়াই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাড়া দেয় না।”
[আরও পড়ুন: ২০ বছর বাদে ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে নেই রোনাল্ডো, লড়াইয়ে মেসি-এমবাপেরা]
মেসির (Lionel Messi) এখন ৩৬ বছর বয়স, রোনাল্ডোর ৩৮। দুই মহাতারকাই নিজেদের কেরিয়ারের শেষ দেখতে পাচ্ছেন। দেওয়াললিখনও পড়ে ফেলেছেন এতদিনে। এখন আর লড়াই কীসের? কীসেরই বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা? রোনাল্ডো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ”আমাদের দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ। দর্শকরা আমাদের লড়াই পছন্দ করতেন, এটাই ভাল দিক। রোনাল্ডোকে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের মেসিকে ঘৃণা করতে হবে না। আবার মেসিকে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের রোনাল্ডোকে ঘৃণা করার দরকার নেই। আমরা দু’ জনে ভাল করেছি, ফুটবলের ইতিহাস বদলেছি। গোটা বিশ্ব আমাদের সম্মান করে। এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।”
এক দশকের বেশি সময় ধরে মেসি ও রোনাল্ডোর মধ্যে লড়াই। দুই মহানায়কের লড়াই সেনসেক্স বাড়িয়েছিল এল ক্লাসিকোর। দারুণ দারুণ সব মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার লড়াইয়ে। সের্জিও র্যামোসের পিছন থেকে মারা লাথি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মেসি। তার পরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়ছেন এলএম ১০। দূরে দাঁড়িয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রোনাল্ডো। খেলা চলাকালীন মেসির পা থেকে বল কাড়ার জন্য নিজেদের পেনাল্টি বক্সে নেমে এসেছেন রোনাল্ডো। এমন ছবিও তৈরি হয়েছিল এল ক্লাসিকোয়। কোপা দেল রে-তে গ্যারেথ বেলের এক্সপ্রেস দৌড়ে হার মানে বার্সা। খেলা ভাঙার পরে গ্যালারি থেকে নেমে এসে রোনাল্ডো তাঁর খর্বকায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। এরকম আরও কত ছবি যে তৈরি হয়েছিল দুই তারকাকে নিয়ে, তার ইয়ত্তা নেই।
রোনাল্ডো এখন ইউরোপ ছেড়ে এশিয়ার ফুটবলে। মেসি চলে গিয়েছেন মার্কিন মুলুকে। ফুটবলমাঠে দু’ জনের সাক্ষাৎ হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই। লড়াইও শেষ। প্রতিদ্বন্দ্বিতারও শেষ। ঘটনা হল, দু’ জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। সেই ২০১৮ সালে রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে চলে যান রোনাল্ডো। তখনই দুরন্ত এক লড়াইয়ের শেষ হয়ে গিয়েছিল। রোনাল্ডো বলেছেন, তিনি এবং মেসি মিলে ফুটবলের ইতিহাস বদলে দিয়েছেন।
ফুটবলের ইতিহাস ব্যক্তিগত লড়াই নিয়ে বহুবার মোহিত হয়েছে। পেলে ও মারাদোনা দুই প্রজন্মের হলেও,তাঁদের মধ্যে লড়াই ছিল, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কার মাথায়, তা নিয়ে কালি খরচ কম হয়নি। কিন্তু মেসি ও রোনাল্ডো তো একই প্রজন্মের। একই সময়ের ফুটবলার। দু’ জনে মিলে বর্ষসেরার পুরস্কার জিতেছেন এক ডজন বার। মেসি ও রোনাল্ডো পেশাদার ফুটবলে ৮০০–র বেশি গোল করেছেন। দু’ জনে মিলে মোট ৭৯টি ট্রফিও জিতেছেন। তাঁদের নিয়ে বিশ্বে মাতামাতি হয়েছে, বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। এটাই তো অনেক বড় ব্যাপার।
মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে রোনাল্ডোকে বলতে শোনা গিয়েছে, ”মেসি নিজের পথ অনুসরণ করেছে। আমি নিজের। আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ওভাবে দেখি না। আমরা অনেকবারই মঞ্চ ভাগ করেছি। সেটা প্রায় ১৫ বছর। আমরা বন্ধু তা বলছি না। কখনও মেসির সঙ্গে ডিনার করিনি। পেশাদার দিক থেকে আমরা সহকর্মী এবং একে অপরকে সম্মান করি।” দু’ জনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, কিন্তু কখনওই একে অপরকে সমালোচনায়-নিন্দায় ক্ষতবিক্ষত করেননি।
একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ৮৫০ গোলের নজির গড়েন রোনাল্ডো। পর্তুগিজ মহাতারকা বলেছেন, ”এটা ঐতিহাসিক মাইলফলক। যেসব রেকর্ড গড়েছি, সবই আমার কাছে গর্বের ব্যাপার। আমাকে আরও বড় কিছু ভাবতে হবে।”