‘জীবনে আর কিছুই বাকি নেই…’ যদি মনে কখনও এই ভাবনা এসে থাকে, তাহলে ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে একবারটি ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন। এ ছবির রসদ কী? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
ছবি- দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক
পরিচালক- সোনালি বোস
অভিনয়- প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস, ফারহান আখতার, জায়রা ওয়াসিম, রোহিত সারাফ
জীবনে আর হাতে গোনা কটা দিন, কিন্তু তবুও হাসিমুখে সেই রণক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়ানো চারটিখানি কথা নয়! পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে আর কিছু সময়ের অপেক্ষা জেনেও কাউকে ভাললাগা, তার প্রেমে পড়া, কোনওরকম সংকোচ না রেখে সাহস করে মনের কথা বলা এবং তারপর অপরপক্ষের উত্তর নেতিবাচক হলেও মাঝরাতে কেঁদে ভাসানো, সোজা কথা নয়। আবার কখনও শেষ হয়ে যাওয়া জীবন নিয়ে আক্ষেপ করা, বেঁচে থাকার আর্তিটুকু ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা, তার অনুপস্থিতিতেও যেন কেউ তাকে মিস না করে, সেসবের রাস্তা তৈরি করে যাওয়া, অনেকটা সাহসের প্রয়োজন হয় এরকম মনোভাবাপন্ন হওয়ার জন্য। ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ ছবিতে সোনালি বোস ঠিক এই বিষয়গুলিকেই তুলে ধরেছেন।
এক মায়ের হার না মানার গল্প
বাস্তবের প্রেক্ষাপট। পালমোনারি ফাইব্রোসিস রোগে আক্রান্ত দিল্লির মেয়ে আয়েষা চৌধুরি, যে কি না কটা মাত্র বসন্ত দেখেই বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে, তার জীবনকাহিনি নিয়েই সোনাসি অতি যত্নে তৈরি করেছেন এই ছবি। এক সন্তানহারা মায়ের কাহিনি পরিচালক সোনালি ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। দুই সন্তান তানিয়া এবং আয়েষাকে হারিয়েও অদিতি চৌধুরি (আয়েষার মা) কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানতে নারাজ। অর্থাভাবকে সঙ্গী করে ছোট্ট আয়েষাকে নিয়ে লন্ডন পাড়ি দেওয়া, ১০ বছর স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত থাকা, ছেলে ইশানের থেকে দূরে থেকে একমাত্র মেয়েকে বাঁচাতে ডাক্তার-নার্সিংহোমে ছুটে বেড়ানো সেই মা-ই কিন্তু এই ছবির আসল ‘হিরো’। যেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সোনালি কিন্তু নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন অদিতি ওরফে প্রিয়াঙ্কার চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য। অতএব, প্রিয়াঙ্কার বলিউড কামব্যাক যে মন্দ হল না, তা বলাই যায়।
প্রিয়াঙ্কা-ফারহান রসায়ন
একটা গোটা ছবি জুড়ে শুধুই অসুস্থতা, রোগ-ব্যধি। কিন্তু তার মাঝেও মিষ্টি একটা রসায়ন উপহার দিয়েছেন সোনালি। মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখাই হোক কিংবা জীবনের যে কোনও সিদ্ধান্তে নীরেন-অদিতির মতামত উত্তর-দক্ষিণ হওয়া সত্ত্বেও, শেষে হাতে হাত ধরে পথচলার রসায়ন মনে ধরার মতো। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র, মানে যাকে নিয়ে গোটা গল্প সেই আয়েষার ভাষায় বললে ‘মুজ আর পাণ্ডার মিষ্টি লাভ স্টোরি’। এই ছবির গল্প যে হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষদের মূলস্রোতে ফেরার অনুপ্রেরণা জোগাবে, তা বলাই যায়।
শেষ না হলেই পারত!
দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত এক অসুস্থ মেয়ের চরিত্রে জায়রা ওয়াসিমের অভিনয়ও প্রশংসার দাবিদার। সে ‘দঙ্গল’ হোক কিংবা ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ জায়রা প্রত্যেক ছবিতে স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’-এও তার অন্যথা হয়নি। আয়েষার জীবনদর্শন তিনি তার নিজের মতো করে উপলব্ধি করে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রিয়াঙ্কা যদি এই ছবির অর্জুন হন, তাহলে জায়রাকে সেই গল্প টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সারথি কৃষ্ণ নির্দ্ধিধায় বলা যায়। অতঃপর ব্যক্তিগতভাবে মনে হল জায়রা তাঁর গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মাঝ রাস্তায় হাল না ছাড়লেই পারতেন! কারণ, বলিউড ইন্টাস্ট্রি আরও নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারত এই অভিনেত্রীকে দিয়ে।
The post কামব্যাকেই বাজিমাত, ‘দ্য স্কাই ইজ পিংক’ ছবির আসল ‘হিরো’ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া appeared first on Sangbad Pratidin.