গৌতম ব্রহ্ম: শীতের সুন্দরবন কাঁপাচ্ছে ফুলেশ্বরী! সঙ্গী ফুটফুটে দুই সন্তান। কখনও বাদাবনের ফাঁক গলে রোদ পোহাচ্ছে। কখনও আবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে গভীর জঙ্গলে। গাইড থেকে পর্যটক, পড়ুয়া থেকে মাঝি-মাল্লা সবাই ফুলেশ্বরীতে মাতোয়ারা! কতই বা বয়স! মেরেকেটে পাঁচ বছর। এই বয়সেই চুটিয়ে সংসার করছে। মা হয়েছে। শাবকদের জঙ্গলে টিকে থাকার বিদ্যা শেখাচ্ছে।
ফুলেশ্বরী। এই নামেই তাকে ডাকে মাঝি-মাল্লা-পর্যটক-গাইড সবাই। সুন্দরবনের এই সুন্দরী বাঘিনীর নামকরণ সরকারের করা নয়। দেখতে সুন্দর বলে বলে স্থানীয়রাই ভালোবেসে এই নাম দিয়েছে। আর সেই নামই ছড়িয়ে পড়েছে লোকের মুখে মুখে। বাদাবনের চরাচর জুড়ে!
গত ৫ জানুয়ারি একদল পর্যটক সুন্দরবনে গিয়েছিলেন। স্কুল শিক্ষিকা, আইনজীবী থেকে ইঞ্জিনিয়ার, পাঁচজন ছিলেন দলে। দলের প্রধান আইনজীবী মন্টু হাইত জানালেন, ৬ জানুয়ারি সকালে বোটে করে বেরিয়ে দেখা পাই ফুলেশ্বরীর। প্রত্যেকেই লেন্সবন্দি করেছি ওই বাঘিনীকে।
সুরজিৎ গুপ্ত নামে এক শিক্ষক শাবকদের লেন্সবন্দি করেন। বোটের বাকি সদস্যরা হলেন বুবাই দলুই, সোমা দত্ত, অপরাজিতা হাজরা। প্রত্যেকেই লেন্সবন্দি করেছেন ফুলেশ্বরীকে। ছানাপোনা-সহ এভাবে বাঘ দেখতে পেয়ে প্রত্যেকেই আত্মহারা। খুশি গাইড কৃষ্ণপদ মণ্ডল, বোটম্যান ভোলা মণ্ডলও। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনকে সুরক্ষিত করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। যা ফলপ্রসূ হয়েছে। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বড়েছে। বাঘেরা প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে। তাই শাবক-সহ বাঘিনির দেখা মিলছে।
[আরও পড়ুন: কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতিদের সংঘাত, মেডিক্যাল মামলা নিজের হাতে নিল সুপ্রিম কোর্ট]
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষে এমনই এক ফ্রেম লেন্সবন্দি হয়েছিল সুন্দরবনের চোরগাজিখালির জঙ্গলে। দুই শাবককে নিয়ে সাঁতরে নদী পেরোচ্ছিল এক বাঘিনী। ফুলেশ্বরীকে অবশ্য অন্যত্র দেখা গিয়েছে। বনদপ্তরের অনুরোধেই সেই জায়গার নাম গোপন রাখা হল। তবে বিশেষজ্ঞরা মেনে নিয়েছেন, সংখ্যা বেড়েছে বলেই সুন্দরবনে এখন পর্যটকরা ঘন ঘন বাঘ দেখতে পাচ্ছেন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা শাবক।
মন্টুবাবু জানালেন, চিড়িয়াখানার বাঘেদের নামকরণ সরকারিভাবে হয়। কিন্তু জঙ্গলের বাঘের হয় না। তবে, বারবার যদি একই বাঘ দেখা যায় তবে গাইডরা নিজেদের সুবিধার্থে নাম দিয়ে দেয়। তবে সবসময় যে সেই নাম ভালোবাসার হয় তা নয়। নান্টু নামে একটি বাঘ ‘মানুষখেকো’ হয়ে উঠেছিল। তার নামও দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। বছর দেড়েক হল নান্টুর দেখা নেই। একটা সময় সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলির ত্রাস হয়ে উঠেছিল এই পুরুষ বাঘ। কিন্তু কী করে চেনা যায় বাঘ? গায়ের স্ট্রাইপ দেখে। লেন্সবন্দি হওয়া ফুলেশ্বরীর ডোরাকাটা দাগের ম্যাপিং করে ফুলেশ্বরীর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন গাইডরা।