shono
Advertisement

বড়দিনের হুল্লোড়ে মেতে এই কাজটা করতে ভুলে যাননি তো?

বড়দিনের ঠিক পরের দিনটায় কী না করলে সারা নতুন বছরটা খারাপ যাবে, তার সুলুকসন্ধানে নামলেন অনির্বাণ চৌধুরী! The post বড়দিনের হুল্লোড়ে মেতে এই কাজটা করতে ভুলে যাননি তো? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:58 PM Dec 26, 2016Updated: 03:28 PM Dec 26, 2016

হইচই, আনন্দ- আপাতত শেষ! বড়দিন পেরিয়ে গেল বলে। এখন নতুন হুল্লোড়ের জন্য তাকিয়ে থাকা বছর শেষের দিনটার দিকে। তার আগে, বড়দিনের ঠিক পরে বক্সিং ডে উদযাপনে মেতেছে বিশ্ব। কেন, সুলুকসন্ধানে নামলেন অনির্বাণ চৌধুরী

Advertisement

ভদ্রলোক বার বার বলতেন- তিনি ঈশ্বরের পুত্র ঠিকই, কিন্তু তাঁর পৃথিবীতে আবির্ভাব মানবজাতির সেবার জন্য। মানুষ যাতে ভাল থাকে, তার জন্যই সারাজীবন চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। এমনকী, মৃত্যুর পরেও কবর থেকে উঠে এসেছেন মানুষের পাশে থাকার জন্য।
তাঁর জন্মদিন পেরিয়ে গেলে তাই একটু চোখ দেওয়া যাক সেইসব মানুষের দিকে যাঁরা বছরভর আমাদের সেবা করেই চলেছেন! কোনও না কোনও ভাবে। কেউ রেঁধে দিচ্ছেন দু’বেলার খাবার, কেউ বা বাসন মাজছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখছেন রোজকার ধুলোজমা ঘরটাকে। কাপড়-চোপড় কেচে আমাদের তৈরি করে দিচ্ছেন ভদ্রসমাজে মুখ দেখানোর জন্য। যিশু খ্রিস্টও কি অনেকটা তাই করেননি? তিনিও তো আমাদের ভিতরটাকে পরিষ্কার করার কাজই করে গিয়েছেন জীবন জুড়ে!
তাই বড়দিনের ঠিক পরের দিনটায় সারা বিশ্ব মেতেছে বক্সিং ডে উদযাপনে। উঁহু, বক্সিং মানে এখানে ঘুষোঘুষি নয়। একটা বাক্সের মধ্যে কোনও একটা উপহার বা টাকাকড়ি ভরে, কাজের লোকদের হাতে তুলে দিয়ে, তাদের ধন্যবাদ জানানোর এই প্রথাই বক্সিং! বড়দিনের ঠিক পরের দিনটায় এভাবে কাজের মানুষদের সম্মান জানানো প্রথা- তাই নামকরণও বক্সিং ডে!


তবে কি না সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বড় দুরূহ শিকল! তা আমাদের এতটাই জড়িয়ে থাকে আষ্টেপৃষ্টে যে চাইলেও ছাড়ানো যায় না। তাই অনেকেই এই কাজের মানুষদের সম্মান দেওয়ার মধ্যেও খুঁজেপেতে ঠিক বের করেছেন এক ধর্মীয় সূত্র। সেই সূত্র বলছে আজ না কি সেন্ট স্টিফেনস্ ডে। ইতিহাস বলছে- এই সেন্ট স্টিফেনও না কি যিশুর মতো শহিদ হয়েছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য। শুধু তাই নয়, যিশুর শিষ্যদের মধ্যেও তিনিই না কি প্রথম প্রাণ বিসর্জন দেন ধর্মপ্রচারের কাজে। তাই যিশুর জন্মের পরের দিনটাতেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর প্রথা।
এবং সেই শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যেও রয়েছে বক্স বা বাক্সের দ্যোতনা। অনেকেই আজকের দিনটায় গির্জার দোরে একটা ধাতুর তৈরি বাক্স শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে যান সন্ত স্টিফেনের উদ্দেশে। এভাবেই তাঁরা সম্মান জানাতে চান মহাপুরুষটিকে। যিনি এক সূত্রে, যিশুর প্রেমের পথে আনতে চেয়েছিলেন বিশ্বকে। সেইজন্যই এই বাক্সটিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা! বাক্স এখানে প্রতীকায়িত করছে এই আমাদেরই মাটির কায়াটিকে। আর তা বেঁধে রাখা হয়েছে সত্য নির্দেশিত পথে। অর্থাৎ যদি সন্ত স্টিফেনের মাহাত্ম্যকেই স্বীকার করতে হয়, তবে এই দিনে আমরা নিজেকেই উৎসর্গ করছি তাঁর কাছে। জানিয়ে দিচ্ছি বেশ প্রকটভাবেই- আমরা তাঁকে ভুলিনি!


কিন্তু এই ধর্মীয় প্রসঙ্গ বাদ দিলেও বক্সিং ডে তো না ভোলারই দিন! সেইসব মানুষদের যাঁরা স্রেফ দুটো পয়সার জন্য বছরভর আমাদের অনেক কিছুই সহ্য করে চলেন! তাই ইউরোপ খুব প্রাচীন কাল থেকেই এই শ্রমজীবী মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে চলেছে। অনেকে বলছেন তার শুরুটা হয়েছিল সেই ১৬৬৩ সাল থেকেই। তার পরে ১৮৩০ সালে এসে সেই শ্রদ্ধা জানানোর প্রথার কথা ঠাঁই পেল অক্সফোর্ড অভিধানে- বক্সিং ডে শিরোপায়-শিরোনামে!
পাশাপাশি প্রচলিত হয়েছে কিছু আচার-বিচারও। যেরকম এই দিনটায় শ্রমজীবী মানুষদের মতো অনেকেই উচ্ছিষ্ট খেয়ে থাকেন। উচ্ছিষ্ট বলতে একেবারে সরাসরি এঁটোকাটা ভাবলে অবশ্য ভুল হবে। উচ্ছিষ্ট বলতে এখানে একেবারেই ভাবতে হবে খাবারের অবশিষ্ট ভাগটুকুর কথা। যা কি না আমরা সচরাচর সারা বছর জুড়েই দিয়ে থাকি বাড়ির কাজের লোকদের হাতে। নিজেরা খেলাম, যা থেকে গেল- তা কি আমরা এমন শ্রমজীবী মানুষদের দিয়ে থাকি না?
দিয়ে থাকি বলেই এই ২৬ ডিসেম্বর তাঁদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করার দিন। ফলে এই দিনটায় বিশ্বের অনেক দেশেই মাংসের ছাঁট দিয়ে নানারকম সুস্বাদু খাবার বানানো হয়। সেই খাবার মানুষ নিজেরাও খায়, বিলোয় গরিবগুর্বোর মধ্যেও। এভাবেই উৎসবের মরশুমে একটা সাম্যাবস্থায় আসার চেষ্টা করি সবাই! যা বজায় না থাকলে জীবন মসৃণ পথে চলবে না! তাই তৈরি হয়েছে বদ্ধমূল এক সংস্কারও- এই দিনটায় কাউকে কিছু না দিলে সারা নতুন বছরটা খারাপ যাবে! তার সঙ্গে একটু টেনেটুনে বাড়িয়ে নিই ছুটির মেয়াদটাকে। সেটা কীরকম?


ভুলে গেলে চলবে না- ২৫ ডিসেম্বরের কিছু আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বড়দিনের উৎসব। প্রকারান্তরে ছুটিছাটার দিন। আসলে এই সময়টায় ইউরোপের অনেক দেশই ঢেকে যায় বরফের সাদা চাদরে। সেই বরফ সরিয়ে, বড়দিনের হুল্লোড় আর মদের হ্যাংওভার কাটিয়ে কাজের জীবনে ফেরাটাও খুব অসুবিধের! তাই এই দিনটায় ইউরোপের অনেক জায়গাতেই বন্ধ থাকে দোকান-বাজার, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের মতো কেজো জায়গা। না কি এই ছুটির চল শ্রমজীবী মানুষের সম্মানার্থে? অনেকটা মে দিবসের মতো?
হতেই পারে! সারা বছর যাঁরা খেটে মরেছেন আমাদের ভাল থাকার জন্য, এই একটা দিনে তাঁদের কি শুধুই উপহার প্রাপ্য? অনেকে তো নিজেদের বড়দিনটাকেও কুরবান করতে বাধ্য হন আমাদের বড়দিনের জোগাড়-যন্তর করতে গিয়ে। তার পরের দিনটায় কি সেক্ষেত্রে তাঁদের ছুটি পাওনা হয় না? তার সঙ্গেই জুড়ে যায় সেল বা ছাড়ের ব্যাপারটাও! বিশ্বজুড়ে শুরু হয় নানা দোকান-বাজারে লোভনীয় সব ছাড়! এই প্রচলনেরও চল তো সেই শ্রমজীবী মানুষগুলোর কথা ভেবেই! যাতে তাঁদের কিছু কিনতে গিয়ে বারবার পকেট নিয়ে মাথা না ঘামাতে হয়!


কিন্তু সমস্যা হল সম্পূর্ণ এক অন্য সামাজিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে মানুষ হওয়া এই আমরা এত কিছু খেয়াল রাখলে তো! আমরা ভুলেই থাকি তাই বড়দিনের পরের দিনটাকে। তার মাহাত্ম্য বিলকুল উপেক্ষা করে জের চালিয়ে যাই নিজেদের ভাল থাকার! বাজার-হাটের সেল-এ ঝাঁপিয়ে পড়ি, নিজেদের বাড়িটা ভরে তুলি নানারকম ভাল ভাল জিনিসে!
এবার সেটায় একটু বিরতি দিয়ে যাঁরা আমাদের সেবা করেন এবং করেই চলেন- তাঁদের দিকে তাকালে হয় না?

The post বড়দিনের হুল্লোড়ে মেতে এই কাজটা করতে ভুলে যাননি তো? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement