শুভময় মণ্ডল: প্রতিবছর পুজো এলেই মনটা উসখুস করে ওঠে। ওমা, উসখুস করবে কেন? বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব বলে কথা। দুর্গাপুজোর ওই চারটে দিনে কী মজা! ঘরে ঘরে আনন্দ। নতুন জামা-কাপড়, ঠাকুর দেখা, অষ্ঠমীতে অঞ্জলি, রোল-ফুচকা, দেদার আড্ডা। এমন আনন্দ আর কোনও কিছুতে আছে কি? ওই চারটে দিনের জন্যই বাঁচে বাঙালি। তাহলে মন উসখুস কেন?
এই যে এত সব পুজোমণ্ডপ। এমন ঘটা করে সাজানো, গোছানো। কত থিম, নতুন চিন্তা-ভাবনা। পুজোর ক’টা দিন থিমশিল্পীদের দৌলতে দেশ-বিদেশের রকমারি শিল্প, সংস্কৃতি চলে আসে বাঙালির দুয়ারে। রাজস্থান থেকে রাশিয়া, চম্বল থেকে চিন, দেশ-বিদেশের হাজারো শিল্প দু’চোখ ভরে দেখা যায়। কিন্তু পুজো শেষ, সেই জৌলুসও শেষ। বিজয়া দশমীতে মায়ের কৈলাসযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের সুর বেজে ওঠে। নাও, এবার সব খুলে ফেলার পালা। দিনরাত এক করে, কয়েকমাসের কায়িক পরিশ্রমে তৈরি করা সৃষ্টি চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেখতে হয় বহু থিমশিল্পীকে। তখন তাঁদের মনে একটাই আক্ষেপ রয়ে যায়, যদি এই এত মেহনতের কাজগুলি সংরক্ষণ করা যেত?
(পাকদণ্ডী বেয়ে আঁধার থেকে আলোয় ফিরল এই মেয়ে)
শহরের বেশ কিছু পুজোকমিটি এমনটা করেও থাকে। নিজের উদ্যোগে শিল্পীর শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। সংরক্ষণ করে তিল তিল করে গড়ে তোলা থিমকে। কিন্তু ট্যাকের জোরে তা সম্ভব। এমন বহু পুজো কমিটি আছে যারা অনেক ভাল থিম করেও শেষপর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে না। বাধ্য হয়ে কিছু পুজো কমিটি কালীপুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটিগুলিকে দুর্গাপুজোর থিম বিক্রি করে দেয়। এতদিন এমনটাই চলত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবার সংরক্ষতি হতে চলেছে থিমশিল্পীদের সেই অতি মূল্যবান কাজগুলি। রাজ্য সরকার কলকাতার পুজোকমিটিগুলির থিমের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন জিনিসগুলিকে সংরক্ষণ করছে ইকো পার্কে। হিডকোর ইকো পার্কে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ হল শহরের সেই পুজো মিউজিয়ামের। এই সংগ্রহশালার নাম রাখা হয়েছে, ‘সংগ্রহ’। কলকাতার কিছু বাছাই করা পুজোর বাছাই করা সৃষ্টি ঠাঁই পেয়েছে এই সংগ্রহে।
কোন কোন পুজোর থিমসামগ্রী ঠাঁই পেয়েছে সংগ্রহে? হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, হিন্দুস্তান পার্ক, সল্টলেকের এ কে ব্লক, কোলাহল গোষ্ঠী, ৪১ পল্লি, ত্রিধারা সম্মেলনী, বড়িশা ক্লাব, বেহালা ফ্রেন্ডস, কালীঘাট মিলন সংঘ, উল্টোডাঙা পল্লিশ্রী, বালিগঞ্জ কালচারাল, টালা বারোয়ারির মতো শহরের অন্যতম সেরা পুজোগুলির থিমসামগ্রী স্থান পেয়েছে এই পুজো মিউজিয়ামে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দর্শনার্থীদের অবগত করার জন্য একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করছে হিডকো। গতবছর পুজোর পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতার রেড রোডে পুজো কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সুসজ্জিত ট্যাবলোয় শহরের পুজোর একটা আলাদা অনুভূতি দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তখনই মুখ্যমন্ত্রী শহরের বাছাই করা পুজোর থিমগুলির সংরক্ষণের ভাবনার কথা বলেছিলেন। সেইমতোই ইকো পার্কে এই পুজো মিউজিয়াম। প্রত্যেকদিন ইকো পার্কের চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংগ্রহশালায় শহরের পুজোকে চাক্ষুষ উপলব্ধি করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তাও একেবারে বিনামূল্যে, জানিয়েছেন দেবাশিষ সেন। এবার তাহলে দশমীর বিসর্জনের পরেও আর ওই থিমগুলির জন্য মন কেমন করবে না। প্রতিবছরই নিশ্চিন্তে থিমের কাজগুলি ঠাঁই নেবে ইকো পার্কের সংগ্রহে।
(বিলম্বে আসতে পারে বর্ষা, এবছর তাপের রেকর্ড হবে বাংলায়)
The post থিমশিল্পর নয়া ঠিকানা ইকো পার্কের পুজো মিউজিয়াম ‘সংগ্রহ’ appeared first on Sangbad Pratidin.