অরূপ বসাক, মালবাজার: ভোটের (Lok Sabha Polls 2024) বাকি আর মাত্র ৩ দিন। অথচ ভোট নিয়ে এখনও নিরুত্তাপ দার্জিলিং থেকে বহু দূরের প্রত্যন্ত চুইখিম, ইয়েলবং, চুনাভাটি, পাবরিংটারের মতো পাহাড়ি গ্রামগুলো। প্রচার বলতে নজরে পড়ছে কেবল কিছু দেওয়াল লিখন।
সোমবার সকালেও চুনাভাটির মানুষের সঙ্গে কথা বললেও ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি কারও মধ্যেই। প্রচার বলতে চোখে পড়েছে তৃণমুল প্রার্থী গোপাল লামার সমর্থনে দেওয়াল লিখন। কয়েকটি পোস্টার, পতাকা। রয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেসের পতাকাও। রাস্তাঘাট ফাঁকা। লোকজনেরও দেখা নেই বললেই চলে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরবাহাদুর থাপা, মনোজ ভুজেল, প্রদীপ বিশ্বকর্মা বলেন, "এই এলাকায় এবার সেভাবে কোনও প্রচারই হয়নি। কোনও দলের প্রার্থীরা এখানে প্রচারেও আসেননি। এলাকার মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার উৎসাহও নেই।"
যে কজন ভোট দেবেন, তাঁদের পছন্দ কোন শিবির? পাবরিংটার গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত বিজেপি সদস্য সন্তু খাওয়াস মুখিয়া। তাঁর দাবি, "সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার খোলনলচে পালটে পাহাড়ি পথে নতুন দু-লেনের জাতীয় সড়ক হচ্ছে। কালিম্পং জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়িয়া গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ যে এর ফলে ভীষনভাবে উপকৃত হবেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং গ্রামের মানুষ আরও একবার বিজেপিকেই ভোট দেবেন।"
[আরও পড়ুন: ‘ওহ লাভলি’ মদন মিত্র থেকে ‘স্টাইলিশ’ মহুয়া মৈত্র, ভোট ময়দানে তৃণমূলের MM ম্যাজিক!]
এলাকায় তৃণমূলের কয়েকজন সমর্থক থাকলেও প্রার্থী গোপাল লামার ভরসার জায়গা হল অনীত থাপা গোষ্ঠীর ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার স্থানীয় সংগঠকরা। চুনাভাটির ব্যবসায়ী রমেশ রাই যার অন্যতম। রমেশের উপর মংপং, চুইখিম, ইয়েলবং, চুনাভাটি, পাবরিংটার প্রভৃতি পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজিপিএম'র পক্ষ থেকে। ভোট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রমেশ রাই বলেন, কালিম্পং-১ ব্লকের অন্তর্গত এই সমস্ত পাহাড়ি গ্রামে বর্তমান জিটিএ বোর্ডের আমলে, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, গ্রামীন সড়ক, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি হয়েছে। মানুষ বিজিপিএম সমর্থিত তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামাকেই ভোট দেবেন। অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি সমর্থিত জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী মুনীশ তামাং অবশ্য দিনকয়েক আগে একবার চুনাভাটি, চুইখিম এলাকায় প্রচার করে গিয়েছেন। কিন্তু তাতেও জাতীয় কংগ্রেসের খুব একটা লাভ হবে না বলে তিনি জানান। পাশাপাশি বিমল গুরুংয়ের কোনও প্রভাব এখন পাহাড়ে নেই বলেই জানান রমেস রাই।
নেতাদের কথায়, লোকসভা নির্বাচনে মানুষ এখানে পরিস্কার দুটো ভাগে বিভক্ত। একদল বিজেপির রাজু বিস্তাকে ভোট দেবেন বলে মনস্থির করেছেন। বাকিরা বিজিপিএম সমর্থিত তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামাকে। বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, দেড় বছর আগে জিটিএ নির্বাচনে গরুবাথান, জলঢাকা, ঝালং প্রভৃতি এলাকায় জিটিএ সভাসদ নির্বাচনে বিজিপিএম'র জয়জয়কার হয়েছিল। পাহাড়ের দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিকের বাইরে ডুয়ার্স ঘেঁষা গ্রামগুলোর সাধারন মানুষের ভোট কোন দিকে বাঁক নেয় তার উপর দার্জিলিং লোকসভা আসনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে।