সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধের কীই বা বোঝে ওরা? ভালমন্দেরই বা কতটুকু বোধ? কিন্তু ভালবাসার অনুভূতি নিশ্চই বুঝেছে৷ তাই তো বিশ্বের ত্রাস ইসলামিক স্টেটের সদস্যদের কাছেই থেকে যেতে চায় দুই ইয়াজিদি কিশোরী৷ মা, বাবা খোঁজ করে বাড়ি ফেরাতে চাইলেও তারা যেতে চায় না৷ সিরিয়ার এক ক্যাম্পে এমনই বিরল ভালবাসার একটুকরো নিদর্শন বিশ্বের সামনে এল৷
[আরও পড়ুন: জনরোষে টালমাটাল ‘লেগকো’, বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করল হংকং]
ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষজন বরাবারই অত্যাচারিত৷ মধ্যপ্রাচ্যের একটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে বসবাস তাদের৷ ওই এলাকা যখনই যার দখলে এসেছে, তখনই তাদের দ্বারা অত্যাচারিত হতে হয় নিরীহ এই মানুষগুলোকে৷ আইএসের উত্থানের পর তারাও ইয়াজিদিদের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চেয়েছিল৷ কয়েক বছর ধরে সিরিয়া, ইরাকে যথেচ্ছ ধ্বংসলীলা চালানোর পর এবছরের শুরুর দিকে আইএসের শক্তি ফুরিয়ে যায়৷ সিরিয়ার বাঘুজে শহরে শেষ ঘাঁটির পতন হয়৷ ধরা পড়তে থাকে একের পর এক আইএস শীর্ষ নেতা৷ইয়াজিদিদের পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারা যায়নি৷ এখনও কয়েক হাজার এই সম্প্রদায়ের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে অত্যাচারিত হয়েই৷ আর সিরিয়ায় এই শোষক শিবিরেই রয়ে গিয়েছে ইয়াজিদি পরিবারের দুই সন্তান৷
পূর্ব সিরিয়ার আল-হোল ক্যাম্প৷ যা একসময়ে আইএসের শিবির ছিল৷ বর্তমানে এখানে কোনওক্রমে মাথা গুঁজে রয়েছে বিদ্রোহীরা৷ বছর তিন আগে এই শিবিরেই কোনওভাবে এসে পড়েছিল ৮ আর ১১ বছরের দুই ইয়াজিদি কিশোরী৷ পরিবার ছেড়ে এমন ভয়ংকর মানুষগুলোর কাছে এসে তো আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকার কথা৷ কিন্তু দুই বোন শোনাচ্ছে অন্য গল্প৷ শত্রুশিবিরের সঙ্গে একটা বন্ধুত্ব, ভালবাসার ভিন্ন সমীকরণ৷
[আরও পড়ুন: ভারতকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের টোপ, রাশিয়াকে টেক্কা দিতে মরিয়া আমেরিকা]
এখন দু’জনের বয়স ১১ ও ১৪ বছর৷ সম্প্রতি আইএসের পতনের পর মেয়েদের খবর পেয়ে আল-হোল শিবিরে গিয়েছিলেন ইয়াজিদি নেতা মহম্মদ রাশো৷ ঘরের মেয়েদের ঘরে ফেরাতে৷ কিন্তু এ কী বিচিত্র ব্যাপার? মেয়েরা তো তাঁকে চিনতেই চাইছে না৷ ঘরে ফেরার নাম শুনে কেঁদেকেটে একশা৷ কিছুতেই ওই আইএস বন্ধুদের ছেড়ে মা,বাবার কাছে ফিরতে একেবারেই রাজি নয়৷ দুই মেয়ে বলছে, তিন বছর আগেই তাদের জীবন পালটে দিয়েছে আইএস সদস্যরা৷ নতুন নামকরণ করেছে, নতুন জীবন, পরিবার দিয়েছে, বদলে দিয়েছে আদর্শও৷ তারা এও বলছে, ‘আমরা নতুন মাকে নিজের মায়ের চেয়েও ভালবাসি৷ তিনি আমাদের মায়ের চেয়েও বেশি যত্ন করেছেন৷ আমাদের নিজেদের বাবা, মায়ের তো ডিভোর্স৷ তাঁরা আমাদের খুব একটা গুরুত্বই দেননি৷ কিন্তু উনি আমাদের এমনভাবে বড় করছেন, যেন আমরা তাঁর নিজের মেয়ে৷’ এভাবেই শাসক-শোষিতের তিক্ততার বাইরেও আপন হয়ে গিয়েছে দুই শিবিরের কয়েকজন অসমবয়সী সদস্য৷ আল-হোলস ক্যাম্পের এই টুকরো গল্পই প্রমাণ, যুদ্ধ কেবল ধ্বংসই করে না৷ কিছু সৃষ্টিও করে৷ তাই যুদ্ধের শেষেও এমন মিলনান্তক কাহিনি লেখা হয়৷
The post যুদ্ধশেষে মিলনান্তক কাহিনি, আইএস ক্যাম্প ছেড়ে যেতে চায় না ইয়াজিদি কিশোরী appeared first on Sangbad Pratidin.