অভিরূপ দাস: যত বিপদ বুড়োদের। তরুণ তরুণীরা নিশ্চিন্ত। এমন চিন্তায় হাতুড়ি মেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিসংখ্যান। ইতিমধ্যেই সে দেশে আছড়ে পড়েছে চতুর্থ ঢেউ (Fourth Wave)। দেখা গিয়েছে আক্রান্তদের গড় বয়স ৩৬ থেকে ৫৯! বয়স্করা দিব্যি সুস্থ। অকারণে বাড়ি থেকেই যে বেরোননি। দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স্করা নিয়ম মানছেন। মাস্ক পরছেন সর্বত্র। অকারণে বাড়ির বাইরে হুল্লোড় করছেন না। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা আক্রান্ত হননি। ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে ঘুরে বেরিয়ে বিপদ ডেকেছেন অল্প বয়সীরাই।
এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ একটি হাসপাতালের তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, টিকা নেওয়া থাকলে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে যাচ্ছে। কতটা? এমনিতে চতুর্থ ঢেউয়ে মৃত্যু হার অত্যন্ত কম। ২০০ জন ভরতি হলে মারা যাচ্ছেন বড়জোর ৪ জন। কিন্তু সেই ২০০ জনের মধ্যে অর্ধেকেরও যদি টিকাকরণ হয়ে থাকে, মৃত্যু হচ্ছে মাত্র ১ জনের। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা অঙ্ক কষে বের করেছেন চার ঢেউয়ের সময়কাল। ২০২০ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় বজায় ছিল প্রথম ঢেউ। নভেম্বর ২০২০ থেকে ২০২১ এর জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল দ্বিতীয় ঢেউয়ের রেশ। ২০২১-এর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মারণ তৃতীয় ঢেউয়ের ডেল্টা। নভেম্বর ২০২১ থেকে শুরু হয়েছে চতুর্থ ঢেউ। দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ ঢেউয়ের সঙ্গে অনেকেই বাংলার তৃতীয় ঢেউয়ের তুলনা টেনেছেন। সময়কাল যে একই।
[আরও পড়ুন: COVID-19: করোনা আক্রান্ত সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রয়েছেন আইসোলেশনে]
শহরের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, এই ঢেউকে ঠেকাতে গেলে টিকা নিতেই হবে। কোথাও এমনটা বলা নেই যে টিকা নিলে করোনা হবে না। কিন্তু টিকা নেওয়া থাকলে করোনার ব্যাপকতা অনেকটাই কমবে। টিকা আর বিধিনিষেধ একসঙ্গে মানলে দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা পাবেন আমজনতা। এই মুহূর্তে দেশ তথা বাংলায় তৃতীয় ঢেউয়ের আগমন হতে আর কয়েকটা দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শিক্ষা নিতে পারে বাংলা।
সিরিল রামফোসার দেশের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার (Coronavirus) প্রথম ঢেউয়ে মৃত্যুর হার যা, চতুর্থ ঢেউয়ে তার চেয়ে অনেক কম। বিশেষ একটি হাসপাতালের লগবুক ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, প্রথম ঢেউয়ে সেখানে ৬,৩৪২ এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। তার মধ্যে ৬৮ শতাংশকে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছিল। চতুর্থ ওয়েভে ২৩৫১ জন ওই একই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছে, যাঁর মধ্যে মাত্র ৪১ শতাংশ ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার, ডেল্টা স্ট্রেনের তুলনায় কম লোককে ভরতি করতে হয়েছে ওমিক্রনে। তবে এমন তথ্য দেখেও সাবধানে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: ওমিক্রন নয়, ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, জানাল স্বাস্থ্যভবন]
পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, যে সমস্ত দেশে চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়েছে, সেখানে একটা বিষয় স্পষ্ট। আনুসঙ্গিক অসুখ থাকলেও যে তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হবেন, এমনটা ঠিক নয়। করোনাবিধি যাঁরা মানছেন না, বিপদটা তাঁদেরই। দক্ষিণ আফ্রিকায় (South Africa) হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ফুসফুসে সমস্যা রয়েছে মাত্র ৩১.৬ শতাংশের। যেখানে তৃতীয় ঢেউয়ে ৯১.২ শতাংশের ফুসফুসে সমস্যা ছিল। অর্থাৎ তৃতীয় ঢেউয়ে বাংলায় চরিত্র বদল করার পরেও ফুসফুসের আঘাত ততটা গুরুতর হবে না। কিন্তু এত কিছুর পরেও সাবধানে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা ওমিক্রনে (Omicron) অনেক কম। দক্ষিণ আফ্রিকার তত্ত্ব বলছে, তৃতীয় ঢেউয়ে ৭৪ শতাংশ মানুষের অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা দেখা গিয়েছিল। চতুর্থ ঢেউয়ে মাত্র ১৭.৬ শতাংশ মানুষের অক্সিজেনের প্রয়োজন পরছে। তৃতীয় ঢেউয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৯.৯ শতাংশকে আইসিইইউতে অ্যাডমিশন নিতে হয়েছিল। চতুর্থ ঢেউয়ে মাত্র ১৮.৫ শতাংশকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভরতি হতে হয়েছে।