shono
Advertisement

হুইলচেয়ারে বসেই চলছে লড়াই, করোনা আক্রান্তদের পাশে হাওড়ার রজনী

শারীরিক হাল ছেড়ে দিলেও মনের জোর একশো শতাংশ।
Posted: 04:01 PM May 20, 2021Updated: 07:06 PM May 20, 2021

সুব্রত বিশ্বাস: শারীরিক হাল ছেড়ে দিলেও মনের জোর একশো শতাংশ। বিশ্বজুড়ে কোভিডের (Corona) ভয়ংকর তাণ্ডবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শরীর নয় মনের জোরকেই পাথেয় করেছেন হাওড়ার বালির শিবু চক্রবর্তী লেনের রজনী চট্টোপাধ্যায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কোভিড রোগীর বাড়ি দৌড়তে পারছেন না ঠিকই। তবে চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন জোগানে সহযোগিতা করে চলেছেন। পাশাপাশি রক্ত, খাবার কোথায় মিলবে সেসব নিয়েও দিনরাত এক করে কাজ করছেন তিনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: হাফপ্যান্ট পরে রেলের অনুষ্ঠানে হাজির বাবুল সুপ্রিয়! তুঙ্গে বিতর্ক]

চল্লিশোর্ধ্ব রজনীদেবী শারীরিকভাবে ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। হুইলচেয়ারেই জীবন কাটছে তাঁর। সঙ্গী বলতে মোবাইল। সেই সঙ্গীকেই এই মহামারী আবহে একশো শতাংশ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে কোভিড রোগীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছেন। এরপর তাঁদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন আশপাশ এলাকার স্বেচ্ছাসেবীদের ফোন নম্বর, ঠিকানা ও কাজের বিবরণ। চরম দুঃসময়ে আকুল আবেদনে এই নাম-নম্বর কাজে লাগছে। সহযোগিতা পাচ্ছেন বিপদগ্রস্তরা। ধন্যবাদও জানাচ্ছেন তাঁকে। এক সময়ে ভাল অ্যাথলিট রজনীদেবী রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে যান ভুল চিকিৎসার জন্য। ১৯৯০ সালে ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীর তকমা নিয়ে সমাজে নতুন করে তাঁর পরিচয় হয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে হুইল চেয়ারে বসেই সেবাধর্ম চালিয়ে যাবেন। সঙ্গীত ভাল লাগায় এক সময় রেডিও লিসেনার্স সংগঠনের সভাপতিও হয়েছিলেন। সমাজ সংগঠনমূলক কাজও করেছেন। তবে এই বিশ্ব মাহামারির যুদ্ধতে তিনিও শামিল থাকতে চান। শরীরে কোনও দক্ষতা নেই। হাতেপায়ে জোর নেই। ডান হাতের কনুই থেকে আঙুল সক্রিয় থাকায় মোবাইলকেই এই যুদ্ধের অস্ত্র করে নেন। নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন যাঁরা এই মুহূর্তে সহযোগিতার কাজ করে চলেছেন। তা সে যে সংস্থাই হোক রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী বা সরকারি তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের শরণে পাঠাচ্ছেন বিপদগ্রস্থ মানুষজনদের। তা সে যে প্রান্তেই হোক। গোবারডাঙা বা বর্ধমান শরীর না পৌঁছলেও সংস্থার নাম নম্বর পৌঁছে দিচ্ছেন অবলীলায়।

রজনীদেবীর পাশাপাশি বালি অঞ্চলে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোভিড যুদ্ধে সামিল হয়েছে। বালি স্বামীজী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মৃত কোভিড রোগীর দেহ সৎকার থেকে ডাক্তার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, স্যানিটাইজের সব ব্যবস্থাই করছে সংগঠনটি। উদ্যোগী প্রাণকৃষ্ণ মজুমদারের কথায়, এই সময়েই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বালির ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের বসতি এলাকার মানুষজন কাজ হারিয়েছেন। তাদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় যুবকেরা। এক সেচ্ছাসেবী টিঙ্কু মুখোপাধ্যায় বলেন, “অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক। কাজ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে খাবার নেই। তাদের খাবার ব্যবস্থাই করা হয়েছে। সাতকাহন ও কোরাস গ্রুপ রক্তদান শিবিরের আয়োজনের পাশাপাশি দুঃস্থ মানুষদের খাবার ও ওষুধ দিচ্ছে। প্রয়োজনে ঘরবাড়ি স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও চলছে সেবামূলক কাজ।” এদিকে, নির্বাচনে পরাজিত হয়েও রেড ভলেন্টিয়ার্স-এর কাজ করছেন বামনেত্রী দীপ্সিতা ধর। বাথরুমে পড়ে থাকা করোনায় মৃত মহিলার দেহ নিয়ে তা সৎকারের ব্যবস্থা দীপ্সিতা ও তাঁর সহযোদ্ধারা। পাশাপাশি ওষুধ থেকে অক্সিজেন ও খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন কোভিড আক্রান্তদের জন্য। দৈনিক হত দরিদ্র ৭০০ পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কৈলাস মিশ্র। ৫৬ ওয়ার্ডে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পল্টু বনিক। আজ থেকে লালাবাবা কলেজে অক্সিজেন পার্লার খোলা হচ্ছে । উদ্যোগী সংগঠন বালি ক্লাব সমন্বয় সমিতি। বিধায়ক রাণা চট্টোপাধ্যায় জানান, অক্সিজেনের মাত্রা কমলে এই পার্লারে অক্সিজেন দিয়ে তা যথাযথ করা হবে। না বাড়লে হাসপাতালে ভরতি করা হবে আক্রান্তকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগকেও অনেকেই পাথেয় করেছেন। সমিত বিশ্বাস নামের এক যুবক রোগীকে বাইকে চড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে। কখনও বা চিকিৎসককে নিয়ে আসছেন রোগীর বাড়িতেই। অনলাইনে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে। কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে এখন বালির মানুষজন ভরসা করছেন এঁদের উপরই।

[আরও পড়ুন: লাইন দিয়েও মিলছে না টিকা! বেলুড় হাসপাতালে ধুন্ধুমার, ভাঙল গেট]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement