shono
Advertisement

পায়ে পায়ে মৃত্যুভয়, পুরুলিয়ার ‘মৃত্যুপুরী’ই এখন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের নয়া ঠিকানা

বিকেল পাঁচটার পর ভুলেও থাকবেন না এই এলাকায়।
Posted: 05:05 PM Dec 20, 2023Updated: 11:54 AM Dec 21, 2023

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ১৭ বছর আগে যা ছিল ‘মৃত্যুপুরী’, সেই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যই এখন অযোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম অফবিট ঘোরার জায়গা। এখনও পায়ে পায়ে তাড়া করে বেড়ায় মৃত্যুভয়। তবুও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে সেই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যে ঘেরা ডাউরি খাল বা ডাউরি নালার কুমিরের হাঁ মুখ দেখতে দুর্গম পথেও পা রাখছেন পর্যটকরা। সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে ঘুরছে ডাউরি নালার নানান ছবি। চারপাশ জঙ্গল আর টিলায় ঘেরা ওই হাঁ মুখের নিচ থেকে পাহাড়ি ঝোরার জল নেমে আসে সমতলের শোভা নদীতে।

Advertisement

দেড় দশক বেশি সময়ের আগেকার কথা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্র-ছাত্রী ২০০৬ সালের ভরা বর্ষায় পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়ের এই ডাউরি নালায় এসে হড়পা বানে ভেসে যান। পাহাড় থেকে নেমে আসা ওই হড়পা বানে মৃত্যু হয় তিনজনের। একজন গাছে উঠে প্রাণে বাঁচেন। আরেকজন গাছের ডালকে ভর করে সাক্ষাৎ মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরেন। স্বাতী, শুভঙ্কর, অরুন্ধতী-অকালেই প্রাণ চলে যায় এই তিন পড়ুয়ার। এই নিয়ে সেই সময় কম হইচই হয়নি রাজ্য রাজনীতিতে।  ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডির হাতে।  ওই ঘটনার পর থেকেই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে  ডাউরি খাল। আর এখন অযোধ্যা পাহাড়ের অফবিট সাইট সিয়িং-র তালিকায় একেবারে উপরে দিকে রয়েছে এই এলাকার নাম।

ডাউরি নালায় কুমিরের হাঁ মুখ। ছবি:প্রতিবেদক।

[আরও পড়ুন: হা ঈশ্বর! আইপিএলের নিলামে বসে ‘ভুল ক্রিকেটার’ কিনে বসলেন প্রীতি জিন্টা]

সেই সব হাড়হিম স্মৃতি নিয়েই বাঘমুন্ডির কুদনা গ্রাম থেকে দেড় কিমি দূরে ডাউরি খালে এখন পা রাখেন পর্যটকরা। কুদনা গ্রামের বাসিন্দা দুর্গাচরণ মাহাতো বলেন, “আগে পর্যটকরা জানতেন না অযোধ্যা পাহাড়ে ডাউরি খালের মতো সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে আসাযাওয়া করলেও ওই ঘটনায় ডাউরি নালাকে অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং করেছে।” মোটরবাইক নিয়ে অযোধ্যা পাহাড় ঘুরিয়ে দেখানো দুলালকুমার বলেন, “ডাউরি নালা ভীষণই দুর্গম। আমরা বাইক নিয়ে পাহাড় ঘোরালেও এই দু’চাকার গাড়িও রেখে দিতে হয়। কুদনা গ্রাম থেকে হেঁটে চাষের জমি পার হয়ে যেতে হয়।”

ডাউরি খাল যাওয়ার পথ। বাঘমুন্ডির কুদনা গ্রামে। ছবি: প্রতিবেদক।

তবে ডাউরি নালা যাওয়ার একাধিক রাস্তা রয়েছে। সেচ নালা পার হওয়া ছাড়াও জঙ্গল পথে যাওয়া যায়। বাঘমুন্ডির সোনকুপির পাতাল ঘর বা হবিট ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষরা অবশ্য জঙ্গলপথে একেবারে পাহাড়ের গা বেয়ে ঘুরিয়ে দেখায়। আসা-যাওয়ায় লেগে যায় ঘন্টা তিনেক। ওই হবিট ট্যুরিজমের ম্যানেজার অর্ধেন্দু ঠাকুর বলেন, “ভরা বর্ষায় এখানে আসা ভীষণই ঝুঁকিপূর্ণ। ওই সময়টা আমরা কোনও পর্যটককে এখানে নিয়ে আসতে চাই না। তবে বর্ষা ছাড়া এখানে আসার একাধিক পথ রয়েছে। পর্যটকরা যেমনটা বলেন আমরা সেই ভাবেই এখানে নিয়ে আসি।”

[আরও পড়ুন: IPL 2024 Auction: সত্যি হল স্বপ্ন, আইপিএলের প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার ঝাড়খণ্ডের রবিন]

বলরামপুর-বাঘমুন্ডি সড়কপথে বহড়াতল মোড় থেকে গাড়ি বা মোটরবাইকে কুদনা গ্রাম যাওয়া যায়। যা কমবেশি সাত কিমি। সেখান থেকে হাঁটা পথ ছাড়া আর কোন উপায় নেই ডাউরি খাল যাওয়ার। চাষের জমি, জঙ্গল, পাহাড়ি পথে যাওয়া-আসা লেগে যায় প্রায় দেড় থেকে দুঘণ্টা। ঘন জঙ্গলে থাকে হাতি। তবুও যারা বেড়াতে এসে রোমাঞ্চ ভালোবাসেন তাঁদের মত পর্যটকরা স্থানীয় গাইড নিয়ে ডাউরিমুখী হন। সেই অর্থে পায়ে পায়ে পথ নির্দেশিকা না থাকায় গাইড ছাড়া কোনওভাবেই যাওয়া যায় না। তবে বিকেল পাঁচটা বাজার আগেই ওখান থেকে চলে আসা ভালো। নাহলে যে কোনও সময় জঙ্গল পথে হাতির দলের মুখোমুখি হয়ে যেতে হবে।

 

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement