জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: দুর্গাপুজো (Durga Puja 2020) মানেই বাঙালির রাত জেগে আড্ডা। কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের ধাক্কায় বদলে গিয়েছে সব কিছু। উৎসবের মরশুমেও সে আতঙ্কে ঘরের দরজা দিয়েছে। সতর্কতার পরিচয় দিয়ে প্রতিমা দর্শনের পরিকল্পনাও বাতিল করেছে কেউ কেউ। কিন্তু মন মানছে কই? তাই তো বন্ধ ঘরে মাঝেমধ্যেই বুকের বাঁদিক চিনচিন করে উঠছে। আর মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে শারদীয়ার স্মৃতি। তবে করোনায় বিধ্বস্ত বাঙালিকে এবার অন্যরকম শারদোৎসবের স্বাদ দিল উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর পাল্লা দক্ষিণপাড়া পুজো কমিটি।
ভিড়ের মাঝে ঠিক কীভাবে নিজেদের ব্যতিক্রমী করে তুলল এই পুজো কমিটি? বুধবার সকাল থেকে পুজো কমিটির সদস্যরা গাড়িতে প্রতিমা বসিয়ে বনগাঁ (Bongao) মহকুমার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ান। বনগাঁ পথের সাথী সেফ হোম, দত্তপাড়া, শক্তিগড়-সহ একাধিক এলাকায় প্রতিমা নিয়ে ঘোরেন ক্লাবের সদস্যরা। করোনা আক্রান্তদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়। দূর থেকে তাঁদের মিষ্টি দেওয়া হয়। করোনা আক্রান্তের পরিজনেরা দূর থেকেই প্রতিমা দর্শন করেন। ভক্তিভরে সারেন প্রণাম। প্রতিমা ছাড়াও গাড়িতে ছিলেন ঢাকি। সঙ্গে ছিল ট্যাবলোও। সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফ এবং করোনা সচেতনতার বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানারে সাজানো হয় ট্যাবলোগুলি। ক্লাব সদস্যরা স্থানীয়দের মাস্ক ও স্যানিটাইজারও বিতরণ করেন৷
[আরও পড়ুন: সামান্য ছাড় পেলেন উদ্যোক্তারা, পুজো মামলায় নয়া নির্দেশিকা জারি কলকাতা হাই কোর্টের]
কেন এমন উদ্যোগ? ক্লাবের সম্পাদক কিশোর বিশ্বাস বলেন, “করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ গৃহবন্দি। এবার তাঁরা একবারের জন্যও মণ্ডপে গিয়ে মা দুর্গাকে দর্শন করতে পারবেন না। অনেকে আবার ভিড় এড়াতে মণ্ডপে যাবেন না। সেই মানুষদের জন্য পাল্লা দক্ষিণপাড়ার পক্ষ থেকে আমরা প্রতিমা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘোরার পরিকল্পনা করেছি। স্যানিটাইজ করছি গোটা এলাকা। মাস্ক বিলি, মিষ্টিমুখ সবই হয়েছে।” বাড়ির সামনে প্রতিমা দেখে বেরিয়ে এসে প্রণাম করেন গৃহবধূ বাসন্তী নাথ। তিনি বলেন, “করোনার জন্য এবার বাড়ি থেকে বেরনো হবে না। বাড়ির সামনে মায়ের দর্শন পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।” গৃহবধূ রিঙ্কু দাসের গলাতেও একই সুর। এভাবে বাড়ির সামনে মায়ের দর্শন পাবো তা ভাবিনি বলেই জানান তিনি।