টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পুজো এলো, আর নতুন শাড়ি বাজারে আসবে না, তা কি হয়। প্রতি পুজোয় নতুন ধরনের শাড়ি বাজার মাতায়। এবার সেই জনপ্রিয়তার দৌড়ে খাতা খুলল, সোনামুখী। এককথায় বাঁকুড়ার সোনামুখী সিল্কের শাড়ি। পুজো একেবারে দরজায় কড়া নাড়ছে। পুজোর বাজারে ক্রেতাদের জমাটি ভিড়। এই মরশুমে জেলার শিল্পীদের হাতে বোনা সোনামুখী সিল্ক পৌঁছে গিয়েছে শহর কলকাতা-সহ জেলার বস্ত্রবিপণিতে।
বাঙালি নারীর ঐতিহ্যের সঙ্গে শাড়ির একটা যোগসূত্র রয়েছে। প্রতিটি বিশেষ ধরনের শাড়ি বাংলার কোনও একটি অঞ্চলের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির পরিচায়ক। ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইতিহাস। যেমন ঢাকার জামদানি শাড়ি, মাইসোরের সিল্ক, তামিলনাডুর কাঞ্চিপুরমের কাঞ্জিভরম কিংবা মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি। তাই এসব শাড়ি কিনে পরতে হলে, ইতিহাসটিও জেনে রাখা জরুরি। আসছে পুজোয় নবমী নিশিথে যদি কাঞ্জিভরম পরতে চান। তাহলে এইবেলা কাঞ্জিভরমের ইতিহাস নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিন। তখন দক্ষিণীশাড়িতে মণ্ডপে শুধু সবার নজরই কাড়বেন না। সপ্রশংস দৃষ্টি নিয়ে যদি কেউ আপনার শাড়ির প্রশংসা করতে আসেন, তাঁকে ইতিহাসও শুনিয়ে দিতে পারেন। এতে মন ভাল থাকবে।
[পুজোয় সাজুন নতুন সাজে, লেহেঙ্গার সঙ্গে পরুন শার্ট]
ফিরে আসি বাংলার কথায়। বাঁকুড়ার সোনামুখী সিল্কের বাংলাজোড়া খ্যাতি রয়েছে। তাই পুজো আসতেই সোনামুখী সিল্কের বুননে হাত লাগিয়েছেন বাঁকুড়ার শিল্পীরা। সোনামুখী শাড়ির শিল্পী সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এই সিল্কের চাহিদা তুঙ্গে। ওজনে হালকা ও নরম এই বারো হাত শাড়ি ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত ধরে খুচরো দোকানে পৌঁছাতেই হিট হয়ে গিয়েছে। শুধু গুণগত মানেই নয়, মনমাতানো রঙের কম্বিনেশন চোখ টানতে বাধ্য। তাই বস্ত্রবিপণিতে গিয়ে একবার সোনামুখী শাড়ি দেখলেই চোখ আটকে যাচ্ছে। রং দেখলেই আর অন্য শাড়ি কেনার কথা ভাবতেই পারছেন না বঙ্গললনারা। দেখলেই পচ্ছন্দ হয়ে যাচ্ছে ক্রেতাদের। তাই, এবছর আমরা রঙের ওপর জোর দিয়েছি। শাড়ির দাম মোটামুটি ৭০০-৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে মোটামুটি দুই থেকে আড়াই হাজারের মধ্যেই পেয়ে যাবেন সোনামুখী।”
উল্লেখ্য, বাঁকুড়ার জয়পুর, সোনামুখী, কোতুলপুর, বিষ্ণুপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় তসর গুটির চাষ হয়। বিষ্ণুপুরের রেশম সিল্কের শাড়ি বিশ্ববিখ্যাত। আগে অল্প সংখ্যক শিল্পী শাড়ি তৈরি করলেও বর্তমানে সোনামুখী এলাকায় অনেকেই এই সিল্কের শাড়ি বুনছেন। এই শাড়ির বুননে রঙের কারিকুরি তৈরি হয়। শিল্পীদের নিপুণ কাজে এবার নজর কাড়ছে এই শাড়ি। বছর বছর ক্রেতার পছন্দ বদলায়। তাই ক্রেতার চাহিদা মেনে শাড়ির রঙেও আসে বদল। বর্তমানে বাংলার চিরন্তন তাঁতের শাড়ির কদর কিছুটা কমেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজার হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। ক্ষয়িষ্ণু সেই শিল্পকে বাঁচাতে এবারের দুর্গাপুজোর জুড়ি মেলাভার। অন্তত এমনটাই দাবি প্রান্তিক সোনামুখীর শাড়ি শিল্পীদের। ইতিহাস বলছে, মোঘল আমল থেকেই ভারতে তাঁতবস্ত্রের রমরমা। সুতো দিয়ে মাকুর উপর নির্ভর করে হাতে বোনা শাড়িই মূলত তাঁতের শাড়ি নামে পরিচিত। একসময় ব্রিটিশদের চাপে ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় তাঁতশিল্প। বাংলা ভাগের পর হুগলি, বাঁকুড়া, নদিয়ার শান্তিপুর, ফু লিয়া, বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলার তাঁতশিল্প যেন নতুন জীবন ফিরে পায় আটপৌরে বাঙালির ঘরে জায়গা করে নেয় ধনেখালি, শান্তিপুরী, ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই তাঁত শিল্পীদের প্রতিভা গুণে তৈরি হচ্ছে রেশমের শিল্ক শাড়ি। শিল্পীদের অভিযোগ, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে ধুঁকছে এই শাড়ি শিল্প। তবে এবার সোনামুখীর সিল্ক শাড়ির বিক্রি হচ্ছে ভালই। এমনই দাবি করেছেন কলকাতা থেকে আসা শাড়ি ব্যবসায়ী মহম্মদ ইউনুস, আফতাব শেখরা। তাঁদের কথায়, এখন প্রমোশনের উপরেই বাজারের সবকিছুই নির্ভর করে। ফলে এবার সোনামুখীর সিল্ক কলকাতা-সহ লাগোয়া শহরতলির বাজারগুলিতে বেশ ভালই বিক্রি হচ্ছে।
[পুজোয় সাজুন হ্যান্ডলুমের শাড়িতে, জেনে নিন কোথা থেকে করবেন শপিং]
The post এবার পুজো মাতাবে বাঁকুড়ার সোনামুখী সিল্ক appeared first on Sangbad Pratidin.