সুমন করাতি, হুগলি: সোশাল মিডিয়ায় প্রেমের টোপ দিয়ে প্রথমে নাবালিকাদের ডেকে অপহরণ, তার পর ভিনরাজ্যে পাচার। আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের সদস্য হিসেবে এসবই করে চলছিল জনা কয়েক যুবক। তাদের দায়িত্ব ছিল, সোশাল মিডিয়ায় প্রেমের টোপ দিয়ে কিশোরীদের জালে টানা। তবে এই 'ছক' আর বেশিদিন কাজ করল না। হুগলি জেলা পুলিশের তৎপরতায় সেই চক্রের পর্দাফাঁস হয়ে গেল। গ্রেপ্তার হয়েছে তিন দুষ্কৃতী। তাদের কলকাতা, অশোকনগর ও বিহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর। ধৃতদের নাম মিজানুর ওরফে রাহুল, শ্রীরাম রায় ও নন্দকিশোর কুমার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুলাই মাসের ১৩ তারিখে তারকেশ্বর এলাকা থেকে সতেরো বছরের এক নাবালিকার অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিলল তারকেশ্বর থানায়। তার পরিবারের অভিযোগ ছিল, মেয়েকে সোশাল মিডিয়ায় প্রেমের 'ফাঁদ' পেতে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের কবলে পড়েছে ওই নাবালিকা। ওই গ্যাংকে পাকড়াও করতে সক্রিয় হয়। পালটা ফাঁদ পাতে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। আর তাতেই আসে সাফল্য! ফাঁদে ধরা পড়ে অভিযুক্ত মিজানুর ওরফে রাহুল ও তার সাগরেদ শ্রীরাম।
আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের পর্দাফাঁসের পর সাংবাদিক বৈঠক জেলা পুলিশের। নিজস্ব ছবি।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, সোশাল মিডিয়ায় প্রেমের টোপ দিয়ে নাবালিকাকে অপহরণ করার দায়িত্ব ছিল তাদের উপর। সেইমতো তারকেশ্বরের ওই নাবালিকাকেও ভুলিয়ে অপহরণ করে বিহারের চম্পারণ এলাকায় পাচার করে নন্দকিশোর কুমারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার কথা জানতে পেরে পুলিশ বিহারে যায় ও চম্পারণ থেকে নন্দকিশোর কুমারকে গ্রেপ্তার করে। ওই এলাকায় তার একটি স্থানীয় নাচের দল ছিল, যার আড়ালে গোপনে সেক্স র্যাকেট চলত। অবশেষে পুলিশ গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখে সেখান থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে।
শুধু তাই নয়, পুলিশের নাগাল থেকে বাঁচতে এরা সকলে নেপালে পালানোর পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। আগেও তারা নেপালে গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ মনে করছে, সুযোগ পেলে ওই নাবালিকাকেও নেপালে পাচারের মতলব করছিল ধৃতরা। এই নারীপাচার চক্র আরও কতদূর বিস্তীর্ণ তার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতদের ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।