চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ‘চাঁদ কেন আসে না আমার ঘরে’। গানের কলিতে ফুটে ওঠা সেই অভিমান নিয়ে বসে না থেকে এবার চাঁদেই ঘর বাঁধার নকশা তৈরি করে ফেললেন বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা। আর তাঁদের সেই নকশা ছিনিয়ে আনল আন্তর্জাতিক সম্মানও। দু’লাখ প্রতিযোগীর মধ্যে সেরা পঞ্চাশে স্থান পেলেন বাংলার সোহম মুখোপাধ্যায়, ঋষিতা ভৌমিক ও জিষ্ণা চক্রবর্তী।
[ আরও পড়ুন: লাল গ্রহে শ্বেতশুভ্র তুষারকুচি, শীত নেমে আসা মঙ্গলে ভিন্ন রূপের ছবি পাঠাল মার্স এক্সপ্রেস ]
ইউরোপের ‘ভলিয়্যুম জিরো অ্যান ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন’ ম্যাগাজিন আয়োজিত ‘মুন সেপশন’ প্রতিযোগিতায় এই ত্রয়ীর তৈরি নকশা সমাদৃত হয়েছে। ইউরোপিয়ান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন সংস্থা বিশ্বব্যাপী ‘মুন সেপশন’ শীর্ষক এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যার মূল বিষয় ছিল, চাঁদে কী ধরনের বাড়ি বানানো হবে, তার নকশা তৈরি। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন কুলটির বাসিন্দা তথা স্নাতকস্তরের আর্কিটেকচারের দ্বিতীয়বর্ষের পড়ুয়া সোহম মুখোপাধ্যায় ও কলকাতার ঋষিতা ভৌমিক, জিষ্ণা চক্রবর্তী। তাঁদের নকশায়, চাঁদের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি বিশেষ বর্মের মধ্যে প্রযুক্তিগত বাড়ি তৈরির পাশাপাশি ভার্টিকাল গার্ডেন তৈরিরও নকশাও রয়েছে। চাঁদেরই মাটিতে বিশেষ রাসায়নিক মিশিয়ে থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছেন ওই তিন বাঙালি ছাত্রছাত্রী।
[ আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে ভারত, প্রশংসা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের ]
ত্রয়ীর নকশায় দেখা গিয়েছে, চাঁদের পাড়াতে দুই বা তিন বেডরুমের ‘বাড়ি’ সঙ্গে ভার্টিক্যাল বাগানও থাকবে। সেই বাগানে থাকবে অ্যাজোলা নামের শ্যাওলা। যা থেকে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন মিলবে। চাঁদের যে অংশে বরফের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সেখানেই দশজন পর্যটক ও পাঁচজন বিজ্ঞানী থাকার মতো বাড়ি তৈরি হবে। রান্না ঘর, মেডিক্যাল রুম থেকে স্টোর রুমের নকশাও রয়েছে। ‘বর্মের’ ভিতর থাকা লঞ্চপ্যাডে ফাইবার, অ্যালুমিনিয়ামের তার ও পাইপ দিয়ে বাড়ির মডেল তৈরি হয়েছে। বর্মের বাইরে বসানো হয়েছে বড় বড় সোলার প্যানেল, যা প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটাবে।
[ আরও পড়ুন: চাঁদের মাটিতে নামল শীতল রাত, বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগের সব আশা শেষ ]
মিঠানি হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় ও মা টিঙ্কু মুখোপাধ্যায়ের ছেলে সোহম মুখোপাধ্যায় বলেন, “চাঁদের অভিকর্ষ বল পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ, সেই কথা মাথায় রেখেই মাইক্রোগ্র্যাভিটি মোকাবিলা করে চাঁদের মাটির সঙ্গে অ্যারোগেট মিশিয়ে বিশেষ বর্ম তৈরি করা হবে। জীবাণুর হামলা, যাবতীয় বিকিরণের হাত থেকে বাঁচতে ‘রক্ষাকবচে’ মুড়ে রাখবে এই বর্ম।” তাঁর কথায়, “ওই বর্ম অনেকটা সার্কাসের তাঁবুর মতো থ্রিডি প্রিন্টেড বা স্বচ্ছ। সেইসঙ্গে তাপমাত্রার ভারসাম্যও বজায় থাকবে। ওই বর্মের মধ্যে তৈরি হবে কলোনি বা পাড়া।” মহাকাশ গবেষণার নতুন তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে নাকি চাঁদে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবে মানুষ। ফলে পায়ের তলায় সর্ষে থাকা বাঙালির ভ্রমণের নেক্সট ডেস্টিনেশন হতেই পারে চাঁদের বাড়ি।
The post কেমন হবে চাঁদে তৈরি বাড়ির নকশা, বানিয়ে ফেললেন তিন বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.