দেবাঞ্জন নন্দী: গত এক দশকে ভারতীয় ফুটবলের ছবি বদলে গিয়েছে অনেকটাই। আইএসএল চালু হওয়ার পর ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠেছে দেশীয় ফুটবল। বিশ্ব ফুটবলের ছোঁয়া লেগেছে। সাবালকত্বের পথে এদেশের ফুটবল।
যুগ যুগ ধরে সমর্থকদের আবেগ প্রকাশের মঞ্চ গ্যালারি। আবেগ-শোক-আনন্দ হাত ধরাধরি করে হাঁটে এই গ্যালারিতে। এখন আগের থেকেও রঙিন গ্যালারি। এখনও সেখানে রয়েছে গান। এই গ্যালারি দেখেছে মেক্সিকান ওয়েভ, ভুভুজেলা!
এখন সেখানেই যোগ হয়েছে টিফো। লম্বা ব্যানার। সেই ব্যানারে রঙিন ভাবনা। সৃজনশীলতা, বার্তা পাঠানোর মতো মুদ্রিত হরফ অথবা ছবি- এই টিফো এখন চায়ের কাপে ঝড় তুলছে। ফুটবলের পাশাপাশি আলোচনার পরিসর বাড়িয়ে দিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: এবার হোয়াটসঅ্যাপেও মোদি, জেনে নিন কীভাবে পাবেন প্রধানমন্ত্রীর বার্তা]
মঙ্গলবার এএফসি কাপের ম্যাচ সব অর্থেই ব্যতিক্রমী এক সন্ধের জন্ম দিয়ে গেল। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে দেখা গেল জোড়া টিফো। একটির স্রষ্টা মোহনবাগান সমর্থকরা। অন্যটি তৈরির পিছনে রয়েছে ওড়িশা এফসি সমর্থকদের মস্তিষ্ক।
রসগোল্লা নিয়ে বঙ্গ-কলিঙ্গের লড়াই দীর্ঘদিনের। মঙ্গল-সন্ধের মোহনবাগান-ওড়িশা ম্যাচে সেই লড়াই জুড়ে দিল ফুটবলের দ্বৈরথকেও। মোহনবাগান গ্যালারিতে দেখা গেল ওড়িশাকে খোঁচা দেওয়া টিফো। লেখা ছিল, ”রসগোল্লা কিন্তু আমাদের, বুঝলে ভায়া।” রসগোল্লা আসলে বাংলারই। রসগোল্লার সঙ্গে সঙ্গে এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচটাও নিয়ে গেল বাংলার মোহনবাগানই।
সে অবশ্য মাঠের ভিতরের ঘটনা। গ্যালারিও যে রঙিন হতে পারে, চমকপ্রদ সব ছবির জন্ম দিতে পারে, তার পরিচয় আরও একবার দেখা গেল কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে। মোহনবাগান সমর্থকদের করা (রক্তে আমার মোহন বাগান) এই অনন্য টিফোর মাধ্যমে বাংলার প্রিয় মিষ্টি রসগোল্লাকে তুলে ধরা হল গোটা বিশ্বের সামনে। ওড়িশা সমর্থকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁরাও এক টিফোতে মন ভালো করে দিলেন সবার। ওড়িশা সমর্থকদের টিফোতে বলা হয়েছিল, ”ওড়িশা আসুন, জগন্নাথ দেব দর্শন করুন।” টিফোয় জগন্নাথ দেবের ছবি। পুরী বাঙালিদের কাছে আবেগের এক স্থান। জগতের দেব জগন্নাথ দর্শনার্থীদের প্রাণের শান্তি, মনের আনন্দ।
এই দুই টিফোর মাধ্যমে দেশের দুই রাজ্যের সংস্কৃতি মুহূর্তে পৌঁছে গেল বিশ্বের দরবারে। পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। বিশ্বায়ন বুঝি একেই বলে। নিজের নিজের রাজ্যের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে গরিয়ান সমর্থকরা গোটা পৃথিবীর সামনে বঙ্গ-কলিঙ্গের স্তুতি গাইলেন।
টিফো সংস্কৃতি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে বহুবার ফুটবল মাঠে দেখা গিয়েছে টিফো। তা নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়েছে, কালি খরচ হয়েছে। উঠে এসেছে রাজনৈতিক তরজা। প্রশ্ন উঠেছে, খেলার মাঠ কি আদৌ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর জায়গা। খেলার মাঠ এমন এক তীর্থক্ষেত্র যেখানে জাত, ধর্ম, বর্ণ, রং সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। উঠে আসে দুই দলের সমর্থকদের উদ্ভাবনী চিন্তাধারা। তারই বহিঃপ্রকাশ এখন ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাঠে। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামও ব্যতিক্রম নয়।
বাংলা-ওড়িশার ফুটবল লড়াই মাঠে হোক। সেখানে দেখা যাক ট্যাকটিক্যাল লড়াই। ঘটুক স্কিলের বিচ্ছুরণ। মাঠের বাইরে বইতে থাকুক আবেগের ফল্গুধারা। গ্যালারি ঢেকে যাক রংবেরংয়ের টিফোতে।