সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিতর্ক রয়েছে ঠিকই, কিন্তু জাতীয় রাজনীতির ময়দানে অভিজ্ঞতা একেবারেই হেলাফেলার জিনিস নয়। সেটা ভালোই বোঝেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সম্প্রতি তুমুল বিতর্কে জড়ানো সত্ত্বেও লোকসভায় টিকিট পেলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের মতো পোড় খাওয়া নেতারা। অন্যদিকে, টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় সাংসদ পদ খারিজ হওয়া তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্রকেও আসন্ন লোকসভায় (2024 Lok sabha Election) প্রার্থী করল শাসকদল।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূলের সংসদীয় রাজনীতির অন্যতম ‘স্তম্ভ’ হিসেবে পরিচিত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (Sudip Bandyopadhyay) বিদায়ী লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতাও বটে। একাধিকবার সামলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদও। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক চরম আকার নিয়েছিল। ৭৫ বছর বয়সী সুদীপ এবার উত্তর কলকাতা থেকে টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়েও শুরু হয়েছিল জল্পনা। বরিষ্ঠ এই সাংসদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে গিয়েছেন তাপস রায়। অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর বাড়িতে ইডি তল্লাশির পিছনে হাত রয়েছে সুদীপের। তাপসের পাশাপাশি সুদীপের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকেও। সুদীপের উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে এবার কোনও মহিলাকে প্রার্থী করার দাবি তোলেন তিনি। অবশ্য এটাও জানান, দল সুদীপকে প্রার্থী করলে তাঁর হয়ে প্রচারে নামতে বাধা নেই তাঁর। যদিও এইসব বিতর্কে দাড়ি টেনে উত্তর কলকাতা থেকে ফের সুদীপকে প্রার্থী করল তৃণমূল।
[আরও পড়ুন: স্টার ভ্যালু নয়, ময়দানের লড়াকুরাই মমতার ‘তুরুপের তাস’]
সৌগত রায়: তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রবীণ নেতা দমদমের সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy)। ৭৭ বছর বয়সি এই নেতা দেড় দশক ধরে সংসদীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। মনমোহন সিংয়ের সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বয়সের ভার ও নবীন-প্রবীণ টানাপোড়েনে এবার লোকসভায় টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “জানি না দল কাকে মনোনয়ন দেবে, যদি আমায় দেয়, আমি জিততে পারব কি না জানি না।” যদিও বয়স বিতর্কে দাড়ি টেনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ভরসার ‘দাদা’ সৌগত রায়কে এবারও দমদম কেন্দ্র থেকেই টিকিট দিল তৃণমূল।
[আরও পড়ুন: তৃণমূলে রীতি বদল, মমতার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে প্রার্থী ঘোষণা ‘সেনাপতি’ অভিষেকের]
মহুয়া মৈত্র: অত্যন্ত সুবক্তা তথা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম বিতর্কিত নেত্রী কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। ২০১৯ সালে প্রথমবার সাংসদ হন ৪৯ বছর বয়সি এই নেত্রী। তবে মেয়াদ শেষের ঠিক আগে সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় গত বছর ডিসেম্বরে সাংসদ পদ হারিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার এবং নগদ টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও প্রাক্তন সাংসদের দাবি, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্য ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনি যে আবারও ফিরে আসবেন সে হুঁশিয়ারিও দেন। গোটা বিতর্কে গোড়া থেকে দল পাশে না থাকলেও পরে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পক্ষে মুখ খোলেন। নদিয়া জেলা রাজনীতিতেও মহুয়ার বিরুদ্ধে নানা কারণে ক্ষোভ রয়েছে নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে। কিন্তু সংসদে তাঁর স্পষ্টবাদী অবস্থান নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুখ খুলে বিজেপিকে কোণঠাসা করার উদাহরণ গড়েছেন মহুয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারও কৃষ্ণনগর আসন থেকে মহুয়াকে দল টিকিট দিল তৃণমূল।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম পরিচিত মুখ আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। ৬৭ বছর বয়সী কল্যাণ ২০০৯ সাল থেকে শ্রীরামপুরের সাংসদ। নিজের সংসদীয় কেন্দ্রকে চেনেন হাতের তালুর মতো। কিছুদিন আগে দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের ‘মিমিক্রি’ করে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ নেতার উপর ফের ভরসা রাখল ঘাসফুল শিবির। শ্রীরামপুর আসন থেকে এবারও টিকিট পেলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।