গোবিন্দ রায়: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করা যাবে না। সি ভি আনন্দ বোসের করা একটি মামলায় মুখ্যমন্ত্রী-সহ তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়কদের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্যপালের আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি কৃষ্ণা রাও তাঁর অন্তবর্তী নির্দেশে জানিয়েছেন, রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। এই অবস্তায় কোনো অন্তবর্তী নির্দেশ না দিলে যাঁদের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ, তাঁদেরকে আরও আপত্তিজনক মন্তব্য করতে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। আদালতের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে পালটা ব্যাখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
তাঁর বক্তব্য, এই মামলায় চ্যালেঞ্জ করা বিবৃতিগুলি মানহানিকর বা ভুল ছিল এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি আদালত (Calcutta High Court)। মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। তবে আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলেও জানান তিনি। এক প্রেস বিবৃতিতে সঞ্জয় বসু বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা রাজভবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। তিনি তাঁর কাছে আসা অসংখ্য মহিলার আশঙ্কার কথাই উল্লেখ করেছেন মাত্র। যে দু’টি অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। রাজভবনের এক মহিলা কর্মী এবং এক জন নৃত্যশিল্পী অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর ওই মন্তব্য মানহানিকর নয়। সাধারণের স্বার্থে এমন কথা তিনি বলেছিলেন।"
[আরও পড়ুন: ‘অন্যের অসুবিধা না করে উৎসব পালন করুন’, মহরমের দিন শান্তিরক্ষায় বার্তা ডিজি রাজীব কুমারের]
তিনি উল্লেখ করেছেন, "একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং একজন নারী হিসেবে তিনি চোখ বন্ধ করে নারীদের অনুভূত দুঃখ-কষ্টের প্রতি অমনোযোগী থাকতে পারেন না। তাঁর বাক স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে, যা ভারতের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চিত করা হয়েছে।" সঞ্জয় বসু (Sanjay Basu) জানান, "মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মহিলাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য দায়বদ্ধ। এর আগেও যে কোনও ক্ষেত্রে, তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।" আদালতেও তাঁর দাবি ছিল, "এই ঘটনা জনসমক্ষে এসেছে অনেক আগেই। মিডিয়াতে যে সমস্ত মন্তব্য করা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মানহানির মামলায় সংবাদমাধ্যমকে যুক্ত না করলে সেই মামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।"
[আরও পড়ুন: রেজিনগরে জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু প্রৌঢ়ের, পথ অবরোধ-বিক্ষোভে উত্তপ্ত এলাকা]
এদিকে মামলা যে ভিত্তিহীন তা প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তাঁর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বলেন, "তাঁর মক্কেল এমন কোনও মন্তব্য করেননি যাতে রাজ্যপালের মানহানি হয়।" কুণাল নিজেও এদিন সোশাল মিডিয়ায় ফের রাজ্যপালকে নিশানা করে পোস্ট করেছেন। তিনি বলছেন, "রাজভবনের এক প্রভাবশালী বাসিন্দার বিরুদ্ধে নারীনির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনা দিল্লির হোটেল তাজ প্যালেস থেকে রাজভবন পর্যন্ত ছড়ানো। তদন্ত হোক। এটা বলা কার আপত্তি থাকতে পারে? এটা বলেছি। আবার বলব।"
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খুলেছেন। মহুয়ার বক্তব্য, "অবিশ্বাস্য! রাজ্যপাল রাজভবনে মহিলাদের যৌন হেনস্থা করবেন তারপর সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলবেন এ বিষয়ে চুপ থাকতে? দুঃখিত আমরা রোজ সংবিধান দিবস উদ্যাপন করি এবং এটা বলেই যাব।"