শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ডায়মন্ডহারবারের জন্য ‘এক ডাকে অভিষেক’-এর সূচনা করেছিলেন সেখানকার সাংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই নম্বরে ডাক এল সুদূর আলিপুরদুয়ার থেকে। দীর্ঘদিন বিদ্যুৎহীন হয়ে ছিল ফালাকাটা বিধানসভার ছোটশালকুমার এলাকা। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ায় সোমবার অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
মাথায় রাখতে হবে এই আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লাই প্রথম বাংলা ভাগের কথা বলেছিলেন। উত্তরবঙ্গকে পৃথক করার দাবি তুলেছিলেন। ‘এক ডাকে অভিষেকে’ মেলা চটজলদি সমাধানের জেরে স্বাভাবিকভাবেই এলাকার মানুষের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ওই বিজেপি সাংসদের দাবি এবং তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি নিয়ে।
[আরও পড়ুন: জিটিএ নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী, ‘ঘরের মেয়ে’কে স্বাগত জানাতে জনতার ঢল]
এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে অভিষেকের কর্মিসভা। সোমবার সন্ধেয় শিলিগুড়ি পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি এই দুই জেলার কর্মীদের নিয়ে অভিষেকের ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা। সভা হওয়ার কথা জলপাইগুড়ির ধুপগুড়ি পুরসভার ফুটবল মাঠে। এই উত্তরবঙ্গ থেকেই সব থেকে বেশি জমায়েত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তৃণমূল। যে উত্তরবঙ্গকে পৃথক করার দাবি তুলেছিল বিজেপি, সোমবারের ঘটনা কার্যত সেখানকার জবাব হয়ে পৌঁছল একইসঙ্গে তৃণমূল আর বিজেপির কাছে। যার ফলে অভিষেকের এই সভা ঘিরে এদিনই তুমুল উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে এলাকার কর্মীদের মধ্যে।
উত্তরবঙ্গ বাংলারই অংশ। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বার্তার পাশাপাশি রয়েছে পঞ্চায়েত এবং তার পর লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে বার্তা দেবেন তৃণমূলনেত্রী। তার প্রস্তুতি চলছে জেলায় জেলায়। সেই উদ্দেশ্যেই অভিষেকের আজকের সভা। সঙ্গে চা বাগানের আদিবাসী এবং স্থানীয় জনজাতির কথাও উঠে আসতে পারে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্যে। রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়নে কী কী কাজ করেছে সে কথাও তুলে ধরবেন তিনি। জেলার যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় মানেই কর্মী সমর্থকদের কাজে বাড়তি অক্সিজেন। তাঁর বক্তব্যই কর্মীদের আরও উজ্জীবিত করবে।
[আরও পড়ুন: মেট্রোপথে জুড়ল ফুলবাগান-শিয়ালদহ, উদ্বোধন স্মৃতি ইরানির, গেলেন না তৃণমূল প্রতিনিধিরা]
সোমবার রাতে শিলিগুড়িতেই জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সেখান থেকে রওনা দেবেন ধুপগুড়ি। ধুপগুড়ি পুরসভার ফুটবল মাঠে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সভার জন্য তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। নিরাপত্তা আঁটসাট করা হয়েছে।
এর মধ্যেই এদিন আলিপুরদুয়ারের স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব দাসের ভিডিও সামনে এসেছে। ফালাকাটা বিধানসভার ছোটশালকুমারের বাসিন্দা এই বিপ্লবই এলাকার বিদ্যুতের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, “গত ৪৫ দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিলাম। বিদ্যুৎ দপ্তরেও আমরা লিখিত জানাই। কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এক ডাকে অভিষেক’ পরিষেবার জন্য দেওয়া নম্বরে ফোন করি। সেখান থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দপ্তর থেকে লোক পাঠিয়ে ট্রান্সফরমার ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়।” বিপজ্জনকভাবে যে তারগুলি স্থানীয় ট্রান্সফরমার থেকে ঝুলছিল সেগুলি ঠিক করে দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, “আমরা মাননীয় সাংসদকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সেই সঙ্গে জানাচ্ছি গ্রামবাসীরা এত দ্রুত পরিষেবায় অত্যন্ত আনন্দিত। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিদু্যৎ দফতরকেও আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”