স্টাফ রিপোর্টার: প্রাক্তন মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) বিশিষ্ট শিল্পপতি জাকির হোসেনের বাড়ি ও কারখানায় আয়কর হানার নেপথ্যে বিজেপির সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, সরাসরি এমনটাই অভিযোগ করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, উদ্ধার হওয়ার টাকা সম্পর্কে আইনি যুক্তি তথ্য ও প্রমাণের সুযোগ না দিয়ে উলটে কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাধ্যমে ছবি ছেড়ে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ করাচ্ছেন দলবদলু বিজেপি নেতারা। জাকিরের মতো প্রখ্যাত শিল্পপতি ও বিধায়কের চরিত্র কালিমালিপ্ত করে তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে জনমানসে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলেও এদিন তোপ দেগেছেন দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
জাকির হোসেনের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কারণেই বিজেপির চক্রান্তে আয়কর অভিযান হয়েছে বলে কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “আয়কর অভিযানে জাকিরের জায়গা থেকে বেশ কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে একটি খবর প্রচারিত হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আইন আইনের পথে চলুক। কিন্তু এর পিছনে পরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে। জাকির হোসেন শুধুমাত্র একজন তৃণমূলের বিধায়ক নয়, তিনি রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বিড়ি শিল্পের পাশাপাশি একাধিক জেলায় তঁার কৃষিভিত্তিক নানা ব্যবসা রয়েছে।” কুণালের প্রশ্ন, ‘‘যদি কোনও জায়গা থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয় এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যবসার প্রয়োজনে তাঁদের বাড়িতে নগদ টাকা রাখতে পারবেন না এটা কে বলল?’’
[আরও পড়ুন: ‘শ্রমিকদের বেতন নগদে দিতে হয়’, কোটি কোটি টাকা উদ্ধারে সাফাই TMC বিধায়কের]
বিড়ি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের পরিকাঠামোগত ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, যেখানে বিড়ি ও অন্যান্য শিল্পে দৈনিক শ্রমিক কাজ করে সেখানে নগদে মজুরি দিতে হয়। তাই যদি হাজার হাজার বিড়ি শ্রমিককে যদি মজুরি দিতে উনি ঘরে নগদ রেখে থাকেন এবং সেটা যদি আয়করের পরিভাষায় ‘ক্যাশ ইন হ্যান্ড’-এর মধ্যে পড়ে সেক্ষেত্রে কিন্তু প্রচারটা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না। প্রচলিত আইনে কারও বাড়িতে অভিযানে টাকা বা সম্পত্তি উদ্ধার হলে তার নথি ও আয়ের উৎস জানতে চেয়ে সময় দেয় আয়কর দপ্তর। কিন্তু এক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের ইমেজে কালিমালিপ্ত করতেই যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া নোটের ছবি ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কুণাল।
বলেন, ‘‘যাঁর কাছে আয়কর হানা হয়েছে তাঁকে নথিপত্র ও যুক্তি তথ্য ও প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না। তার আগেই সংশ্লিষ্ট এজেন্সি সংবাদ মাধ্যমের ব্যবহার বা অপব্যবহার করে যেভাবে ছবি ছড়িয়ে দিল তা জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য। যদি আয়কর দপ্তরের অভিযান করার প্রয়োজন হয়, তা করতেই পারে। কিন্তু যদি উদ্ধার হওয়া টাকা অবৈধ বলে মনে হয় তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হবে। কিন্তু তার বদলে টাকা উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে নোটের সাজানো ছবি সংবাদ মাধ্যমে চলে যাচ্ছে।’’ এরপরই নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে তৃণমূল মুখপাত্রের তোপ, ‘‘এটাই প্রমাণ করে জাকিরের বিরুদ্ধে আয়কর অভিযান সুপরিকল্পিতভাবে ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার জন্য রীতিমতো ছক কষে সুসংগঠিতভাবে করা হয়েছে। যেখানে দলবদলু বিজেপি নেতারা দু’দিন আগে বলেছেন, এরপর ওর বাড়িতে যাবে, এজেন্সি যাবে, তারপর আয়কর হানা হলে কেন্দ্রীয় এজেন্সির আর বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে?’’ একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের বাড়িতে কেন অভিযান হচ্ছে না বলেও এদিন ফের প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র? বলেন, ‘‘প্রসন্ন রায়, নিয়োগ দূর্নীতিতে অভিযুক্ত, তার বাড়িতে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে দলিল পাওয়া যাচ্ছে, পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ হয়েছে। ক’বার দিলীপবাবুর বাড়িতে গিয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি, কবার তদন্ত হয়েছে? নারদা মামলায় শুভেন্দুর নাম এফআইআর তালিকায় আছে? সারদাতেও অভিযুক্ত বিরোধী দলনেতা, কবার তাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তল্লাশি হয়েছে?’’