ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু মজুমদার: নির্দলরা জিতলেও তাঁদের দলে নেওয়া হবে না। পরিষ্কার জানিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। রবিবারও দলের বিক্ষুব্ধদের মধ্যে যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, এমন বহু প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। এরপরও অনেক নির্দল দলের কথা না শুনে ভোটে লড়বেন বলে জানাচ্ছেন। বলছেন জিতে তৃণমূলে ফিরবেন। সেই প্রেক্ষিতেই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বক্তব্য, “দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, দলের প্রার্থীদের হারিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখে যদি কেউ ভেবে থাকেন দলে ফিরে আসবেন, সেই ভাবনা সফল হবে না। কারণ যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা জিতবেন না। দলেও ফেরা হবে না।”
যাঁরা দলের কথা না শুনে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন, ইতিমধ্যে দল থেকে তাঁদের বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়েছে। এবার যাঁরা জিতে তৃণমূলে ফিরতে চান বলে প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, তাঁদের নিয়েও দলের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হল। এই প্রসঙ্গে বিধানসভা ভোট পরবর্তী সময়ে অনেকের তৃণমূলে যোগদানের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন পার্থবাবু। সেক্ষেত্রে যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্থবাবু বলেন, “অনেকেই তো বিধানসভা ভোটের আগে দল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। তাদের কি সকলকে ফেরানো হয়েছিল? এ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
[আরও পড়ুন: দাদার নজর এড়িয়ে হবু বউদির সঙ্গে প্রেম ও সহবাস, বিয়ের পরই শ্রীঘরে ভাই]
এমন পরিস্থিতি কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) ক্ষেত্রেও হয়েছিল। সেক্ষেত্রে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দলের অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছিলেন যাঁরা দলের হয়ে লড়েছিলেন, তাঁরা হারলেও দল তাঁদের সঙ্গে নিয়েই থাকবে। নির্দলদের ফেরানো হবে না। সেই একই কথা কার্যত আরও একবার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন পার্থবাবু। বলেছেন, “অনেকেই তো বিজেপিতে (BJP) গিয়ে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাঁদের সবার জন্য দল দরজা হাট করে খুলে দেয়নি। তাই যাঁরা নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নির্দল প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করবেন, আবার ফিরে আসার স্বপ্ন দেখবেন, দুটো এক সঙ্গে হবে না।” এদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) শাসকদলের যাঁরা টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে লড়ছেন, তাঁদের নিয়ে ফের ‘এটা তৃণমূলের গট-আপ গেম’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
এদিকে, দলের সঙ্গে আই-প্যাকের (I-Pac) সম্পর্ক নিয়েও ফের মুখ খুললেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সরাসরি আই-প্যাকের নাম না করলেও প্রয়োজন পড়লে পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও বলে দিয়েছেন, কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হলেও কাজটা দলই করবে। রবিবার শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ফের আই-প্যাকের প্রসঙ্গ আসে। সাংবাদিকদের জবাব দিতে গিয়ে তা নিয়ে তৃণমূল ও আই-প্যাক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা কী তা বলে দেন পার্থবাবু। তাঁর কথায়, “যার যেখানে দরকার আছে, সে সেখানে দরকার মতো কাজ করছে। যার কাছ থেকে যখন পরামর্শ নেওয়ার নেওয়া হবে। তবে কাজটা দলই করবে।”
[আরও পড়ুন: হস্টেলের বাইরে মামাকে দেখেই ছুট, ঘরে ঢুকে হাতের শিরা কাটল ছাত্রী!]
শ্রীরামপুরের সাংসদ যদিও এদিন বৈদ্যবাটিতে পুরভোটের প্রচারে গিয়ে আই-প্যাককে নিশানা করে। ঝাঁজালো আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “কোথায় গেল আই-প্যাকের লোকগুলো? দালালি করার সময় অনেক লোক পাওয়া যায়। কাজ করার সময় তাদের কাজ করতে হবে।” সাংসদের চ্যালেঞ্জ, “যারা নাম গুঁজে দিয়ে প্রার্থী করেছিল তাদের জেতানোর জন্য এবার ময়দানে নামুক।” আই-প্যাককে সাংসদের এভাবে আক্রমণ করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও কল্যাণকে (Kalyan Banerjee) ‘ভাল সংগঠক’ বলে প্রশংসা করেছেন মহাসচিব। বলেছেন, “কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের অন্যতম নেতা। হুগলি জেলায় তিনি কাজ করছেন। ভালভাবেই তাঁকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। সুতরাং অসুবিধা কোথায়?”
অন্যদিকে, ভোটে প্রার্থী হওয়া নিয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ দলের সুরেই মন্তব্য করেছেন। বলেন, “অনেকেরই প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু সকলে প্রার্থী হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে কেউ প্রার্থী হতে না পারলে তাঁকে দলের জন্য করতে হবে। দলের বাইরে কেউ নয়। দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে।” এক্ষেত্রে নিজের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জানান তাঁর সব প্রার্থী পছন্দমতো হয়নি। আর যেসব বিধায়ক দু’-একজন প্রার্থী দিয়েছিলেন, তাঁদেরও এখন দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।