ধীমান রায়, কাটোয়া: অন্তর্কলহের চরম বহিঃপ্রকাশ। এবার চড়া সুর পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর খোকন দাসের (Khokon Das) গলায়। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করার সময় তিনি তৃণমূল ছাড়ার হুমকিও দিলেন।
সোমবার বর্ধমানের কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দির মাঠে ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের (TMC) কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই কর্মী সম্মেলনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর খোকন দাস অভিযোগ করেন, “বর্ধমান পৌরসভার এক প্রাক্তন পৌরপতি তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় গিয়ে বলেছেন, পৌরসভায় অনেক টাকা রাখা ছিল। সব টাকা খোকন বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে। বর্ধমান খোকন দাস বিক্রি করে দিয়েছে। আরে খোকন দাস পৌরসভার পৌরপতি বা উপপৌরপতি কিছুই ছিল না। খোকন দাস পৌরসভার কোনও কাগজে সই করেনি। শুধুমাত্র কাউন্সিলর ছিল। নতুন পৌরবোর্ড গঠন হওয়ার আগে যা টাকা রাখা ছিল তার দ্বিগুণ টাকা ফিক্সডে রাখা হয়েছে। তিনি কিছুই জানেন না। না জেনে শুধু ধাপ্পাবাজি। লোককে চাকরি করে দেব বলে বেড়াচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: প্রাক্তন স্বামীকে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগ, তরুণীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর উত্তেজিত জনতার]
খোকন দাস আরও বলেন, “এক একটা ওয়ার্ডে ৭০-৮০ জন পদাধিকারী। সবাই কাগজ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পকেট ভরতি চাকরি। বলছে আমাদের সঙ্গে দল করলে চাকরি করে দেব। কাগজ দিয়ে বলা হচ্ছে এতদিনে তোমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হল তোমরা তৃণমূল করো। আসলে তোলাবাজি করার জন্য কাগজ দেওয়া। তোলাবাজি করে দলটাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমরা এসব মানব না।” পাশাপাশি খোকন দাসের কথায়,” প্রয়োজনে দল ছেড়ে দেব। তবু আইনুল হককে মানব না। সিপিএমের আমলে এই আইনুল হক কাঞ্চন উৎসব করতে দেয়নি। আইনুল হক বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নাম দিয়ে কোন কিছু করা যাবে না।”
বাম আমলে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন আইনুল হক। তিনি পরবর্তীকালে বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়েছিলেন। তারপর তৃণমূলে যোগ দেন। সম্প্রতি খোকন দাসের সঙ্গে আইনুল হকের জোর টক্কর চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। খোকন দাস এদিন নাম না করে দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকেও একহাত নেন। তিনি বলেন, “আইনুল হককে পাশে বসিয়ে সভা করবে মানব না। প্রয়োজনে দল ছেড়ে দেব। তবু্ও ওসব মানব না। উচ্চ নেতৃত্বকে বলব আপনারা পরীক্ষা করে দেখুন কারা দলটা করে। আর কারা দলের নামে তোলাবাজি করে। আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করে দেখুন। মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।”
খোকন দাস এদিন মঞ্চ থেকেই অভিযোগ তোলেন, “তৃণমূলের লোকদের বলা হচ্ছে মারব, ধরব। সিপিএম থেকে দলে এসে এসব করে বেড়াচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে আইনুল হক বর্ধমানে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন। তিনি তখন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করেছিলেন। আর এখন তৃণমূল নেতা। ” এই বিষয়ে আইনুল হক কিছু বলতে অস্বীকার করেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “ও কি বলেছে জানি না। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।” তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “দলে কোন সমস্যা থাকলে মিটিয়ে নেওয়া হবে। কেউ দল ছাড়বে না।” বিজেপির বর্ধমান জেলার সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তা বলেন, “বিজেপিতে আসার জন্য অনেক তৃণমূল নেতাই পা বাড়িয়ে আছে। আর ওদের দলের গোষ্ঠীকোন্দল সবাই জানে।”