সন্দীপ চক্রবর্তী: যে বাড়িতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল, যে বাড়ি থেকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি হওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন, প্রায় ছ’ মাস পর আবারও সেই ভিটেয় ফিরলেন মুজিবর ইসলাম মজুমদার। কিন্তু এবার তিনি নিথর, কফিনবন্দি। আগরতলায় (Agartala) বাঁধাঘাটের মিলনপল্লিতে দুষ্কৃতী হামলায় নিহত তৃণমূল নেতা মুজিবরের কফিনবন্দি দেহ যখন পৌঁছল, সকালের আলো যেন ম্লান। এলাকায় শোকের আবহ। এখান থেকেই তো শুরু হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পথ। এদিন বাঁধাঘাটে দলীয় নেতার মরদেহের সঙ্গে গেলেন বাংলার তৃণমূল নেতৃত্ব – ব্রাত্য বসু, শান্তনু সেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন ত্রিপুরার (Tripura) তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিক। পরে সেখানে যান বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মন, বরখাস্ত হওয়া আশিস সাহারাও। সকলেই মুজিবরের কফিনে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজই সোনামুড়ায় হবে তাঁর শেষকৃত্য।
নিহত মুজিবর ইসলাম মজুমদার ত্রিপুরার সক্রিয় তৃণমূল (TMC) নেতা বললে কমই বলা হয়। সেই বাম আমল থেকে সে রাজ্যে ঘাসফুলের সংগঠন গড়তে তাঁর অবদান ছিল অতুলনীয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বিরুদ্ধে নিজে ভোটে লড়েছিলেন মুজিবর। সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। দুষ্কৃতীদের হামলায় এহেন এক নেতার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই সে রাজ্যে ঘাসফুল শিবিরে বড় ধাক্কা।
[আরও পড়ুন: লাদাখ সীমান্তে সেনা পাঠাতে প্যাংগং লেকে সেতু বানিয়ে ফেলেছে চিন, স্বীকার করল কেন্দ্র]
গত ২৮ আগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে মুজিবর ইসলাম মজুমদারের বাসভবনে একটি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অভিযোগ, ওইদিন বেশ কয়েকজন বিজেপি (BJP) আশ্রিত দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। মুজিবরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরও ৩জন তৃণমূল কর্মী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হন। মুজিবর ইসলাম মজুমদার এবং এক ছাত্রনেতার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ওই ছাত্রনেতা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। আঘাত গুরুতর হওয়ায় মুজিবর ইসলাম মজুমদারকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় সেই সময় তাঁর অস্ত্রোপচার করা যায়নি। এরপর রক্তে শর্করার পরিমাণ কিছুটা কমলে তাঁকে ফের ১৮ ডিসেম্বর এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি করা হয়। অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই মৃত্যু হয় তাঁর। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুজিবর।
[আরও পড়ুন: Coronavirus: লাগামহীন করোনা, দেশে একদিনে সংক্রমিত ১ লক্ষ ১৭ হাজার]
এদিন মুজিবরকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ব্রাত্য বসু, শান্তনু সেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে একই সারিতে দেখা গেল বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়ক সুদীপ রায়বর্মন, আশিস সাহাদেরও। তাঁরাও একযোগে দাবি তুললেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। রাজনৈতিক রং না দেখে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। আর এতেই স্পষ্ট, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও বিজেপি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে অশনি সংকেত দেখছেন সকলে।