বাবুল হক, মালদহ: পরনে সাদা কুর্তা, সাদা ধুতি। ঘাড়ে গামছা। চড়া রোদেও তিনি আচমকা ছুটে যাচ্ছেন ফুলহার নদীর পাড়ে। আর তাঁকে দেখতে পেলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে মাটি মাফিয়াদের দৌড়। পালাচ্ছে ট্রাক্টর, ট্রলার। পালাচ্ছে মাটি কাটার শ্রমিক। না, এ হিন্দি সিনেমার কোনও দৃশ্য নয়। আর তিনিও কোনও ‘বাহুবলী’ নন। তবে এলাকার ‘নানা’ বটে। তাঁকে ‘দাদু’ বলে ডাকেন অনেকেই। মালদহের (Maldah) ফুলহার নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এভাবেই দিনরাত পাহারায় মগ্ন আশি পেরনো বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। এবং তাঁর এই ভূমিকা নিয়ে দলের মধ্যেই ঝামেলা চরমে। কারণ তাঁর তোপ যে দলেরই ব্লক সভাপতি এবং স্থানীয় থানার ওসির বিরুদ্ধে। সমরবাবুর দাবি, তাঁরাই নাকি মাটি মাফিয়াদের মদত দিচ্ছেন।
নিজেই প্রহরীর ভূমিকায় কেন রতুয়ার তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA)? চড়া রোদ উপেক্ষা করে ফুলহার নদীর চরে দাঁড়িয়ে সমরবাবুর গলায় করুণ সুর, “এখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরেই আমার পৈতৃক ভিটে। মাটি মাফিয়ারা এভাবে রোজ নদীর চর কেটে নিয়ে গেলে শুধু আমার বাড়িটাই নয়, দেড় লক্ষ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। মানুষকে বাঁচাতেই এই বয়সে আমাকে পাহারা দিতে হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: বার্লিনে মোদিকে দেশাত্মবোধক গান শোনানো শিশুর ভিডিও বিকৃতি! বিতর্কে কুণাল কামরা]
তাঁর আক্ষেপ একটাই, “নদীর মাটি চুরি রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানা হচ্ছে না।” সঙ্গে থাকছেন কিছু গ্রামবাসীও। সকাল, সন্ধ্যা, এমনকী রাতেও চরে দাঁড়িয়ে থাকছেন সমরবাবু। রতুয়া বিধানসভার তৃণমূল বিধায়কের পাশাপাশি তিনি দলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। এছাড়া ভূমি দপ্তরের বিধানসভা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তিনি। সমরবাবুর অভিযোগ, “মদত দিচ্ছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ফজলুল হক। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন একাংশ সরকারি আমলা। ভয়ংকর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে মালদহ জেলার রতুয়া ব্লকের মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। এনএইচ ১৩১এ সড়কের উপর নির্মিত ফুলহার নদীর এই সেতু বাংলা-বিহারকে আরও কাছে এনেছে। এই সেতুর তলদেশ থেকেই মাটি কাটছে মাফিয়ারা।”
[আরও পড়ুন: ‘মমতাদিদির অত্যাচার তো কম…’, শিলিগুড়িতে কীসের ইঙ্গিত দিলেন অমিত শাহ]
এ বিষয়ে রতুয়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, “পাগল হয়ে গিয়েছেন সমরবাবু। তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সিবিআই ডেকে তদন্ত করে আমার জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ করুন। আমি চ্যালেঞ্জ করছি।” বিজেপির দক্ষিণ মালদহের সাংগঠনিক সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ী বলেন, “মাটি নিয়ে কোটি কোটি টাকার কারবারের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল।” তবে তৃণমূল জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বক্সি বলেন, “সমরবাবুর অভিযোগের যথার্থ প্রমাণ রয়েছে। বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের নজরে আনা হবে।”