স্টাফ রিপোর্টার: মুকুল রায়ের আচমকা দিল্লিতে বিজেপির ডেরায় চলে যাওয়া নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। বললেন, ‘‘যে কেউ আসছে, যাচ্ছে, দলটা রেস্তরাঁ হয়ে গিয়েছে। কেউ এসে ফিশ চপ অর্ডার দিচ্ছে, খেয়ে চলে যাচ্ছে। কেউ এল কাটলেট খেল, ফিশফ্রাই অর্ডার দিয়ে খেয়ে চলে গেল, ইচ্ছেমতো।’’ শুধু তাই নয়, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের লড়াকু সৈনিক মদনের এরপরই আশঙ্কাভরা শব্দে সংযোজন, ‘‘এবার তো সবাই মুকুলের পথে হাঁটবে।’’ আসলে মদনের তীব্র কটাক্ষের নেপথ্যে দিল্লিতে বসে বুধবার সংবাদমাধ্যমে করা মুকুল রায়ের মন্তব্য, ‘‘কয়েক ঘণ্টার জন্য আমি তৃণমূলে গিয়েছিলাম।’’ বস্তুত এরপরই গত একবছরে মুকুলের কার্যকলাপ নিয়ে কটাক্ষ করে দলের উদ্দেশেই ঘুরিয়ে মদনের প্রশ্ন, ‘‘গত বছর ২১ জুলাই মমতা অভিষেকের পাশেই মুকুলের চেয়ার ছিল। বিজেপিতে চলে গিয়ে সব খবর দিয়ে তারপর পাগল সেজে এলে মঞ্চে জায়গা হয়ে যাবে?’’
নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত বলে আরও পাঁচজনের নাম বিজেপির তরফে টুইটে ভাসিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুকুল রায় দিল্লি পৌঁছে যান। উল্লেখ্য, ওই পাঁচজনের মধ্যে বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়েরও নাম ছিল। দিনভর নাটকের শেষে মঙ্গলবার রাতে অজ্ঞাতবাস থেকে টিভি চ্যানেলে ‘ফোন ইন’ দিয়ে মুকুল জানিয়ে দেন, বিজেপিতে ফেরার জন্যই তিনি দিল্লি গিয়েছেন। এরপরই বুধবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুকুল রায় কোথায় যাবেন, কোথায় যাবেন না, সেটা তাঁর ব্যাপার। মুকুল রায় বিজেপির বিধায়ক।’’
[আরও পড়ুন: ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না সুবীরেশ, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ]
এর কিছুক্ষণ পরেই মুকুলকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। বলেন, ‘‘মুকুলকে নেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, দিল্লিতে বিজেপির সিংহাসন দখল করে ফেললাম আমরা।’’ এমন মন্তব্যের করার জন্য দল যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় তার জন্য তিনি তৈরি জানিয়ে অবশ্য বিস্ফোরক অভিযোগ করে মদন বলেন, ‘‘এটা শুভেন্দু অধিকারীর গেমপ্ল্যান। মুকুলকে দিয়ে কিছু নাম বলানো হবে, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে। তাই মুকুল রায়কে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
এরপরই হিন্দি সিনেমার উদাহরণ তুলে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মদন বলেন, ঘটনা পরম্পরা দেখে অক্ষয় কুমার অভিনীত একটি ছবির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মদনের কথায়, “ওই সিনেমায় শরীরে চিপ ঢুকিয়ে দিলে লোকেশন ট্র্যাক হয়ে যাবে ও সব গোপন তথ্য বেরিয়ে আসবে। বিজেপি তার ডিজিটাল টিম দিয়ে এই কাজ করাচ্ছে না তো? এ সব না করলে তো মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তো কিছু করা যাচ্ছে না।’’ বিজেপিকে কটাক্ষ এখানেই থামানি মদন। ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি খুব চিন্তিত। বাড়িতে বলেছি, কেউ কোনও ইঞ্জেকশন দিতে এলে যাচাই করে নিতে। বিজেপি হয়তো নতুন কোনও চিপ বের করেছে। সেটা মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
মদনের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসার পরই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কামারহাটির বিধায়ক শুভেন্দুর পরিকল্পনা বলে উল্লেখ করলেও আসলে মুকুল সংক্রান্ত ঘটনাক্রম ইঙ্গিত করে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘মুকুলকে কেনই বা দলে ফিরিয়ে আনা হল, কেনই বা এত মুকুল মুকুল হচ্ছে? একইসঙ্গে মুকুলের ‘রহস্যজনক’ দিল্লিযাত্রা নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে তদন্তের দাবি তুলে মদন বলেন, ‘‘আমি চাইব মুকুলের হঠাৎ কী হল, সেই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-ইডিকে দেওয়া হোক। মনে রাখতে হবে, মুকুল শুধু এই দেশের একজন নাগরিক নন, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও বর্তমান বিধায়ক। তাঁকে দিয়ে কী করিয়ে দেবে বোঝা যাচ্ছে না। এটাও হয়তো বলাতে পারে যে ২০ জন বিধায়ক টাকা নিয়েছে।’’