কৃষ্ণকুমার দাস: বিক্ষিপ্ত অশান্তির মধ্যেই বৃহস্পতিবার ভোট মিটেছে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র নন্দীগ্রাম (Nandigram)-সহ বাংলার আরও ৩০ আসনে। কোথাও বুথ দখল, কোথাও ছাপ্পা ভোট, কোথাও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের মতো অভিযোগ প্রতিবারের মতো এবারও উঠেছে। নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী বুথে বুথে ঘুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। আবার তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুথ পরিদর্শন করে পালটা বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অশান্তি নয়, এবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের আশঙ্কা করে নির্বাচন (Election Commission) কমিশনকে চিঠি লিখলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ তথা শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী (Dibyendu Adhikari)। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে ভোট পরবর্তী নন্দীগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। কমিশন যেন এ বিষয়ে নজর রাখে, চিঠিতে সেই আবেদনও জানিয়েছেন দিব্যেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁর এই চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে।
পরিবারের সব সদস্যই ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পা রেখেছেন গেরুয়া শিবিরে। দাদা শুভেন্দু একুশের ভোটে নন্দীগ্রামের পদ্ম-প্রার্থী। লড়াই করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ভাই সৌমেন্দু কাঁথি পুরসভার পুরপ্রশাসকের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পরই তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরের সদস্য হয়েছন। বাবা বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীও অমিত শাহর হাত ধরে ভোটের দিন কয়েক আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন আনুষ্ঠানিকভাবে। এসবের মাঝে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ তথা অধিকারী পরিবারের আরেক সদস্য দিব্যেন্দু এখনও দলবদলের খাতায় নাম লেখাননি। তিনি নিজের রাজনৈতিক দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে থেকেই। এবার তিনিই নন্দীগ্রাম অর্থাৎ তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত অন্যতম স্পর্শকাতর স্থানের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে চিঠি পাঠালেন কমিশনকে। কোনও রাজনৈতিক শিবিরের দিকে ঝুঁকে নয়, এক জনপ্রতিনিধি হিসেবেই দিব্যেন্দুবাবু নিজের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন।
[আরও পড়ুন: টেট দুর্নীতির কাঁটায় বিদ্ধ তৃণমূলত্যাগী বিজেপি প্রার্থী, বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর বিরুদ্ধে পোস্টার]
নন্দীগ্রামে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা খুব কম নয়। বেশ কয়েকটি এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। তবে এখানে বরাবর সম্প্রীতির পরিবেশই দেখে এসেছেন সকলে। একুশের ভোটে সেই পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার ভোট ধর্মীয় মেরুকরণের একটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। এবং তাতে অশান্তির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। এবার স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর চিঠিতেই স্পষ্ট, সেই আশঙ্কা অমূলক নয়। তবে দিব্যেন্দুবাবুর এই চিঠি নিয়ে খানিক জলঘোলাও হয়েছে। কারও কারও মতে, শাসকদলের জনপ্রতিনিধিই যদি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাহলে বুঝতেই হবে, পরিস্থিতি গুরুতর।