সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একুশের সভামঞ্চে ‘জোটধর্ম’ পালন তৃণমূল সুপ্রিমোর। শহিদ দিবসের সভা থেকে চড়া সুরে বিজেপিকে নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু INDIA’র জোট শরিক কংগ্রেস কিংবা বামেদের বিরুদ্ধে সেভাবে আক্রমণ শানাতে দেখা গেল না তাঁকে। রাজনৈতিক মহল বলছে, জাতীয়স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে জোটের কথা ভেবেই বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর নরম রাখলেন তিনি।
শুক্রবার একুশের (TMC Shahid Diwas) সভা থেকে চব্বিশের সুর বেঁধেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। জানিয়ে দিয়েছেন, চেয়ারের মোহ তাঁর নেই। স্রেফ জোটের সৈনিক তিনি। জোটধর্ম পালন করেই নেতৃত্বের দাবিতে সরব হননি মমতা। একইভাবে জোট শরিক কংগ্রেস, বামেদের বিরুদ্ধে সুর চড়াননি তিনি। আধঘণ্টার বক্তব্যে একবারই অনুযোগের সুরে বাম কর্মী-সমর্থকদের নিশানা করতে শোনা গিয়েছে মমতাকে। বলেছেন, সিপিএমের বন্ধুদের কাছে আমি তো চক্ষুশূল! এরপরই বাম আমলে পঞ্চায়েত ভোটে খুনখারাপি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধভাবেই ‘প্রধান শত্রু’ বামেদের নিয়ে ‘চুপ’ ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর INDIA জোটের প্রধান শরিক কংগ্রেসকে নিয়ে তো একটাও শব্দ খরচ করলেন না। বরং বারবার জোটের জয়ধ্বনিই শোনা গেল মমতার কণ্ঠে। প্রসঙ্গত, গতবারও একুশের মঞ্চ থেকে কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় নিশানা করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: ‘চেয়ারের কেয়ার করি না, ইন্ডিয়ার পাশে সৈনিক তৃণমূল’, একুশের মঞ্চে বার্তা মমতার]
তাৎপর্যপূর্ণভাবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৪২-এ ৪২ আসন জেতার দাবিও করলেন না মমতা। তাহলে কি কৌশলে লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জোর লড়াই থেকে দূরে থাকলেন তৃণমূল সভানেত্রী? উল্লেখ্য, এর আগেও সভা থেকে মমতা বলেছেন, “বাম-কংগ্রেসকে কিছু বলছি না, কারণ জাতীয়স্তরে একটা জোটের কথা হচ্ছে।” আর এদিন সেই ধর্মই কার্যত পালন করলেন তৃণমূল নেত্রী। তবে মমতা যতই জোটধর্ম পালন করুন, বাম-কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব কিন্তু সেই পথে হাঁটছেন না। বরং পঞ্চায়েত হিংসা নিয়ে ঘনঘন তৃণমূলকে নিশানা করছেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরীরা। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে বহু কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকেই। এর মধ্যেই জাতীয়স্তরে সোনিয়া-রাহুল গান্ধীদের সঙ্গে ‘সখ্যতা’ বেড়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর। ফলে প্রদেস কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, দিল্লিতে তো জোট হল। এখানকার কং কর্মীদের প্রাণের দাম কে দেবেন? সূত্রের খবর, কর্ণাটকের বৈঠকে পর্দার আড়ালে এনিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেই জোটধর্ম মেনেই এদিন প্রদেশ কংগ্রেসকে নিয়ে কার্যত চুপ থাকলেন মমতা, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
১৯৯৩ সালে বামেদের নৃশংস অত্যাচারে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই কালোদিনের স্মৃতিতেই প্রতি বছর ধর্মতলা মোড়ে ২১ জুলাই পালন করে তৃণমূল। অথচ এবারের সেই সভা থেকেই বামেদের নিয়ে কার্যত নীরব থাকলেন মমতা। যা দেখে রাজনৈতিক মহল বলছে, জাতীয়স্তরে বিজেপিকে হারানোই তৃণমূল সুপ্রিমোর পাখির চোখ। তাই পুরনো বৈরিতা ভুলে জোটধর্ম পালনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মমতা।