স্টাফ রিপোর্টার: দীপাবলির আগে প্রবীণদের জন্য নতুন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ কার্যকর না হওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার যে প্রসঙ্গে পালটা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘প্রকৃত সত্য গোপনে’র অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের শাসকদলের প্রতিক্রিয়া, ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ নিয়ে বিজেপির মিথ্যাচারের জবাবে রাজ্যজুড়ে প্রচারে নামা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প কেন বেশি কার্যকর, প্রচারে সে কথাই বাংলার মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।
বুধবার এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অর্ধেক টাকা যে রাজ্য সরকারকে দিতে হয়, সে কথা চেপে যাওয়া হচ্ছে। অথচ নানা শর্ত থাকায় এই প্রকল্পের সুবিধা অর্ধেক মানুষই পাবেন না। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছেন, তার সুবিধা সব শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেই কারণেই স্বাস্থ্যসাথীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ আগের দিন প্রবীণদের জন্য নতুন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লির তৃণমূল এবং আপ সরকার অসুস্থ মানুষকে কেন্দ্রীয় সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। এই জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লির প্রবীণ নাগরিকদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে পালটা তিরে বিঁধে কুণাল বলেন, ‘‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে প্রায় অর্ধেক টাকা রাজ্য সরকারকে দিতে হয়। তার আবার নানারকম শর্ত আছে। আপনার স্মার্ট ফোন থাকলে আপনি পাবেন না, আপনার টু হুইলার থাকলে পাবেন না, এই থাকলে পাবেন না, ওই থাকলে পাবেন না। অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ তো এই সুবিধাই পাবেন না। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী করেছে, যাতে সব পরিবারের সব মানুষ এই স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাটা পান।’’
'আয়ুষ্মান ভারত' প্রকল্পে মোট খরচের ৬০ শতাংশের বেশি কেন্দ্রীয় সরকার দেয় না। বাকি টাকাটা বহন করতে হয় রাজ্য সরকারকে। যে কারণে নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প চালু করে দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে অংশ নেয়নি। কারণ হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, মোবাইল ফোন, দু চাকার বাহনের মতো অতি সাধারণ জিনিসের জন্য মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পাবে না। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প সব পরিবারের সবার জন্য প্রযোজ্যই নয়। অথচ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক টাকা দিতে হয়। বাংলায় সেই টাকাটা না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প’ এনেছে। যে প্রকল্পে রাজ্যের সব পরিবারের সব মানুষ স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাটা পান। কারণ রাজ্যের টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ রাজ্যের সব মানুষ উপকৃত হচ্ছেন না - এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনওভাবেই পছন্দ নয়। কুণাল ঘোষের দাবি, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে যে টাকা দিতে হত, সেই টাকাটা বাঁচিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথী নামে আলাদা প্রকল্প চালু করেছেন। যেখানে রাজ্যের সব পরিবারের সকলে পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আনুষঙ্গিক যা সুবিধা আছে, সব কিছু পাবেন।
কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি নেতারা, ইভেন আনফরচুনেটলি অনারেবল প্রাইম মিনিস্টারও ইমপ্রেশন দিচ্ছেন যে, রাজ্য সরকারের জন্য বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত চালু করতে পারলাম না। আরে বলুন না! আপনাদের প্রকল্পের শর্তগুলো বলুন। তাহলে মানুষ বুঝে যাবে যে আপনারা নাটক করছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা অর্ধেক পরিবার, অর্ধেক ব্যক্তি তো পাবেই না।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তার পরও আমরা বলছি, আয়ুষ্মান ভারত যদি করার ইচ্ছে হয়, করুন। তবে প্রকল্পের ১০০ শতাংশ টাকা নিজেরা দিয়ে করুন।’’ তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, এবার থেকে যাঁরা ‘আয়ুষ্মান ভারত’ শব্দবন্ধ উচ্চারণ করবেন, তাঁরা যাতে স্পষ্ট করে এটাও বলে দেন যে কে কে এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। সে কারণেই রাজ্য ও কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের ‘বেসিক’ ফারাকটা আরও একবার তারা সাধারণ মানুষের সামনে এনে দিতে রাজ্যব্যাপী প্রচারে নামতে চলেছে। মানুষ যাতে বুঝতে প্রকৃত সত্যটা বুঝে নিতে পারে।