স্টাফ রিপোর্টার: এবার উপনির্বাচনে (WB By Election 2022) জোড়াফুলের জোড়া জয়েও কাটা হয়ে রইল বালিগঞ্জের দুই ওয়ার্ড। দু’টিতেই মাত্র সাড়ে তিনমাস আগের পুরভোটে প্রায় ২০ হাজারের আশেপাশের মার্জিনে জিতেছিল তৃণমূল (TMC)। দুই ওয়ার্ডেই পরিচিত ও পুরানো কাউন্সিলররা জনপ্রতিনিধি। তা সত্ত্বেও কেন ওই দুই ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় হারলেন সেই ত্রুটি অনুসন্ধানের পাশাপাশি আত্মসমালোচনা শুরু করে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে ঠিক বিপরীত ছবি সিপিএমে (CPIM)। বালিগঞ্জের দুটি ওয়ার্ড ছাড়া তাদের হাতে রয়েছে পেনসিল। তাতেও দমতে রাজি নয় লালশিবির। উলটে দ্বিতীয়স্থান পেয়েই খুশি কমরেডকুলের নেতারা। দ্বিতীয় হওয়ার আহ্লাদে রবিবার বালিগঞ্জে মিছিল বামেদের।
নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা দলের দক্ষিণ কলকাতার সভাপতি বিধায়ক দেবাশিস কুমার শনিবার ফল প্রকাশের পর জানিয়েছেন, “ওই দুই ওয়ার্ডে সামান্য কিছু ভোটে হারের জন্য সাংগঠনিক কৌশলের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে ২০১৪ সালে বামের যে ভোট রামে পাঠিয়েছিলেন আলিমুদ্দিনের নেতারা সেটাই উপনির্বাচনে অনেকটা ফিরেছে লালশিবিরে।” অবশ্য তৃণমূলের ভোট কম পাওয়ার জন্য বিজেপি ও বাম শিবিরের তরফে বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে প্রচারে সাম্প্রদায়িক উসকানি ও কুৎসাকে দায়ী করেছেন দেবাশিস কুমার।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপি নেতাদের গালে চড় কষাল আসানসোল’, শত্রুঘ্নর কাছে ‘হেরে’ও খুশি বাবুল]
উপনির্বাচনের প্রচারে ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই প্রকাশ্যে এসে পড়ায় তীব্র অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মীসভায় পাঞ্জাব হাউসে দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জেরে জখম হন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা কাউন্সিলরের স্বামী সুশীল শর্মা। বর্তমান পুরমাতা নিবেদিতা শর্মার সঙ্গে প্রাক্তন পুরপিতা মাখনলাল দাসের গোষ্ঠীর লড়াই থামাতে নিজের বাড়িতে বৈঠক ডাকেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
অন্যদিকে ৬৪ ওয়ার্ডের ব্লক সভাপতি বিজলী রহমানের সঙ্গে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসে ফের কাউন্সিলর হওয়া শাম্মী জাহানের এলাকা দখলের লড়াই নিয়ে বিরক্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শাম্মী সমর্থকদের সিন্ডিকেটের দাপট নিয়েও অসংখ্য অভিযোগ এসেছে পুরসভাতেও। দুই ওয়ার্ডে দুই গোষ্ঠীর লড়াই থামাতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন দেবাশিস কুমার ও বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সংঘর্ষ থামলেও তার প্রভাব যে ইভিএমে পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ হল দুই ওয়ার্ডে বামেদের কাছে জোড়াফুলের হার। সাড়ে তিনমাস আগে পুরনির্বাচনে যে ৬৪ নম্বরে ১৮৪০২ ভোটে জিতেছিলেন শাম্মী সেখানেই বাবুল একই প্রতীক নিয়ে ২২৪ ভোটে হেরে গেলেন। অন্যদিকে ৬৫ নম্বরে পুরনির্বাচনে নিবেদিতা শর্মা ২২৬৩০ ভোটের মার্জিনে জিতলেও এবার বাবুল হারলেন ৯১৮ ভোটে।
[আরও পড়ুন: ভাঙড়ে কাকিমাকে ধর্ষণ, দার্জিলিংয়ে যৌন নির্যাতন এড়াতে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ তরুণীর]
তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, এই ৬৫ নম্বরেই প্রয়াত রিজওয়ানুর রহমান ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বাড়ি। এমন ফলের আঁচ করে মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় প্রচুর দৌঁড়ঝাপ করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কাউন্সিলর বনাম ব্লক সভাপতি লড়াইয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়ে কে কাকে শিক্ষা দিতে চাইলেন? ওয়ার্ডে বাবুল হারতেই দুই গোষ্ঠী পরাজয়ের দায় একে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়েছে। বস্তুত এই কারনেই দলীয়স্তরে অন্তর্তদন্তের ঘোষণা করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। দুই ওয়ার্ড হারতেই এমন বিবাদমান ওয়ার্ডগুলি যে শীর্ষ নেতৃত্বের আঁতস কাঁচের নিচে চলে এল তা স্বীকার করছে তৃণমূল।