ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কাউন্সিলর ভোটে পাড়ার লড়াই। দলের পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমাই সেখানে যথেষ্ট। তবে পুরভোটকে সামনে রেখে আসলে ২০২১-এর বিধানসভার প্রস্তুতি চলবে অন্দরে। বিজেপির সঙ্গে সরাসরি কঠিন রাজনৈতিক লড়াই। তৃণমূল তা বিলক্ষণ জানে। সেই লড়াইয়ে নামার আগে রাজ্যের প্রতিটি মানুষের প্রশ্নাতীত সমর্থন প্রয়োজন। রাজ্যবাসীর কাছ থেকে সেই সমর্থন আদায় করতেই দলের এক লক্ষ পদাধিকারীকে এবার ময়দানে নামাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২ মার্চ, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তা নিয়েই বড়সড় কর্মসূচি ঘোষণা করতে চলেছেন মমতা।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৭৫ দিন অর্থাৎ আড়াই মাস ধরে দলের পদাধিকারীরা এই কর্মসূচি নিয়ে ব্লক স্তরে পৌঁছবেন। যেখানে আমজনতাকে সরাসরি শামিল করে নিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। কীভাবে হবে এই কর্মসূচির প্রচার? মমতাই তৃণমূলের মুখ। তাঁকে কেন্দ্র করেই দলের যাবতীয় কর্মসূচি। ২০২১-এ লড়াই প্রবল হলেও বাংলার ক্ষমতায় তাঁকে ফিরিয়ে আনাই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য। তাই নতুন কর্মসূচিতে মমতার ইমেজকেই তুলে ধরা হবে।
[আরও পড়ুন: CAA নিয়ে বার্তা দিতে কলকাতায় অমিত শাহ, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ বাম-কংগ্রেসের]
সরকারের কাজে গাফিলতির খবর নিতে এতদিন কাজ করেছে ‘দিদিকে বলো’-র দপ্তর। তাতে বড়সড় সাফল্য এসেছে। সূত্রের খবর, সেই কর্মসূচিতে মোট সাড়ে আট হাজার গ্রামে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। ৭০০০ গ্রামে মানুষের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া সেরে সেখানেই রাত কাটিয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। দলীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, গত লোকসভা ভোটই দেখিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের তরফ থেকে কোনও না কোনওভাবে বেশ কিছু স্তরে গাফলতির কারণে মানুষ বিমুখ হয়ে গিয়েছেন। সরকারের কাজ মানুষের কাছে সর্বতোভাবে পৌঁছয়নি। তা না হলে জঙ্গলমহলে এত কাজ করেও সেখানে ফল খারাপ হয় কী করে? উত্তরবঙ্গের মানুষ বিমুখ হয় কী করে? – দলীয় নেতৃত্বের কাছেই এসব প্রশ্নের জবাব তলব করেছেন স্বয়ং নেত্রী।
গত লোকসভায় রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে অনেকটা উপরের দিকে উঠে এসেছে বিজেপি। দলের পর্যবেক্ষণ, এই ফলাফলই প্রমাণ করে দিয়েছে, সরকার মানুষের জন্য কাজ করলেও, দল সেই কাজ নিয়ে মানুষের কাছে যায়নি। তা না হলে এমন ফল হয় না। লোকসভায় ১৮টি আসন বিজেপির কাছে হারাতে হয় না। ‘দিদিকে বলো’-র দপ্তরের রোজ কয়েক হাজার ফোনই এর কারণ বুঝিয়ে দিয়েছে। গাফিলতি শুধরে এবার সেই পরীক্ষাটা দিতে হবে তৃণমূল দলকে। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী প্রচুর কাজ করেছেন। সেই কাজকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দলীয় কর্মীদেরই মানুষের কাছে যেতে হবে। দলের প্রতি মানুষের সমর্থন ফিরিয়ে আনতে তাঁদেরই রাস্তায় নামতে হবে।”
[আরও পড়ুন: পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার অভিনব সুযোগ! রাজ্য দপ্তরে ড্রপ বক্স বসাল বিজেপি]
ঠিক হয়েছে, মোট ১০টি ধাপে এই কর্মসূচি হবে। ধাপগুলি কী? যতটুকু জানা গিয়েছে, তাতে এলাকার জমজমাট বাজারগুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে। চায়ের গ্লাস হাতে সেখানেই দলের জনপ্রিয় কাউকে সামনে রেখে বড় ধরনের আড্ডার আয়োজন করার কথা। যে আলোচনার মূল বিষয় হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর কাজ। আলোচনায় আসতে পারে মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকল্প ও তার প্রভাব, সরকারি দলের জনপ্রতিনিধি, ভোট, সম্ভাব্য প্রার্থী, বিজেপির ভোট শতাংশ – সব কিছুই। নেতৃত্বের আশা, এই আড্ডায় ক্রমে ক্রমে ঘেঁষতে শুরু করবে উৎসাহী আমজনতা।
The post ‘দিদিকে বলো’-র পর নয়া কর্মসূচি, রাজ্যের কাজ নিয়ে আড়াই মাস রাস্তায় থাকবে তৃণমূল appeared first on Sangbad Pratidin.