সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্মরত অবস্থায় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার। একাধিক বিচারাধীন বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা। ঘুরিয়ে শাসকদলকে নিশানা! কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Ganguly) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকার এখন রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রে। ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে সরাসরি আপত্তি না তুললেও বিচারপতির ভূমিকা নিয়ে ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)।
দমদমের সাংসদ (Dumdum Parliament) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিচারপতিরাও বিচারের ঊর্ধ্বে নন। আমাদের দেশে এর আগে বিচারপতিদেরও ইমপিচ করা হয়েছে।’ প্রকাশ্যে এভাবে বিচারপতির সাক্ষাৎকার দেওয়াটা ঠিক কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌগতবাবু বলেন,’ উনি যেটা বলছেন সেটা ঠিক কিনা, তা দেশের লোক বিচার করবে।’ বিচারপতির সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করলেও সিবিআই (CBI) সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণকে ঘুরিয়ে সমর্থন করেছেন সৌগত। তাঁর বক্তব্য,’বিচারপতি বলেননি যে সিবিআই ধোঁয়া তুলসীপাতা। উনি বলেছেন, সিবিআইকে দিলে হয়তো একটু ভাল হবে ভেবে তিনি এই নির্দেশগুলি দিয়েছেন।’
[আরও পড়ুন: সহপাঠীদের স্নানের ভিডিও করতে ধৃত ছাত্রীকে চাপ দিত প্রেমিক! চণ্ডীগড় ভিডিও কাণ্ডে প্রকাশ্যে নয়া তথ্য]
বস্তুত, সোমবারের সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক মন্তব্য করেছেন, যা বিচারাধীন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন,’গত কয়েক বছরে রাজ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো দুর্নীতি হয়েছে।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বিচারব্যবস্থা নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল,’আমি ভেবেছিলাম ওনাকে ডেকে তিন মাসের জন্য জেলে ঢুকিয়ে দেব।’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সৌগত আরও একবার বলেন,”বললাম তো বিচারপতিরা বিচারের ঊর্ধ্বে নন। এর আগেও আমরা বহু বিচারপতিকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া চালিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: জানা নেই হিন্দি, মহিলার সিট বদলালো ইন্ডিগো, বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে সরব তেলেঙ্গানার মন্ত্রী]
বস্তুত, সোমবার রাতে বিচারপতির ওই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার সম্প্রচার হওয়ার পর জনমানসে জোর চর্চা শুরু হয়েছে, আদৌ একজন বিচারপতি কর্মরত অবস্থায় এভাবে টিভি চ্যানেলে তাঁরই এজলাসে চলা বিচারাধীন মামলা নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না? এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আইনজ্ঞমহলও। কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) একাধিক প্রবীণ আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, ‘‘স্বাধীনতার পর কখনওই সংবাদমাধ্যমে সরাসরি মুখ খুলে কোনও বিচারপতি এমন নজির গড়েননি। এরপর যদি বিচারপ্রার্থীরা বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলে, তখন কী হবে?’’ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষের দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশ ও গাইডলাইন অনুযায়ী একজন কর্মরত বিচারপতি এভাবে সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিতে পারেন না।’’ হাই কোর্ট বারের সহ-সভাপতি কল্লোল মণ্ডল বলেন, ‘‘কোনও বিচারপতি যদি সমাজের ভাল নিয়ে মন্তব্য করেন, তাহলে খারাপ কিছু নয়। কিন্তু, যদি বিতর্কিত মন্তব্য করেন, খারাপ কিছু বলেন, যাতে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে অবশ্যই নিন্দনীয়।’’