বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মশলা উন্নয়ন প্রকল্প, গবেষণা অধিকরণ দীপককুমার ঘোষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সৌরভ মাঝি।
রান্নার অন্যতম উপকরণ মশলা। আর সেই মশলার মধ্যে সবার আগে যার নাম করতে হয় সেটি হল মেথি। যা এক ধরনের বীজ। এটি রান্নায় স্বাদ, গন্ধে অন্য মাত্রা এনে দেয়। তরকার ঝোল ও স্যুপে বর্তমানে মেথির ব্যবহার বাড়ছে। আবার মেথির ভেষজ গুণও রয়েছে প্রচুর। ডায়াবেটিস রোগেও উপকারী মেথি। শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়ক মেথি। আবার মেথি শাকও দারুণ উপকারী। মেথি শাক রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে ও রাতকানা রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। দুগ্ধবতী গাভীকে মেথি বীজের গুঁড়ো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এই সব গুণাবলীর জন্যই সবদিক থেকে মেথি চাষ অত্যন্ত লাভজনক। শীতকালীন মশলা হিসেবে মেথি চাষ করতে পারলে ভাল পয়সা ঘরে তুলতে পারবেন চাষিরা। বিদেশেও মেথির ভাল চাহিদা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: বাড়তি লাভ চান? রুই, কাতলার সঙ্গে করুন পেংবা চাষ]
জলনিকাশির সুব্যবস্থাযুক্ত গাঙ্গেয় সমভূমির বেলে-দোআঁশ মাটি মেথি চাষের উপযোগী। মেথি গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে চলবে না। মেথির সঠিক বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য শুকনো ও ঠান্ডা আবহাওয়া প্রয়োজন। উন্নত জাত হিসেবে হিসার মুক্তা, হিসার মাধবী, রাজেন্দ্রকান্তি, হিসার সোনালি, কোয়েম্বাটোর-১, পন্থ রাগিনী প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকের মধ্যে মেথির চাষের জমি তৈরি করে ফেলতে হবে। চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমি সমতল রাখতে হবে। দেড় মিটার চওড়া ও পাঁচ মিটার লম্বা আকারের কয়েকটি প্লটে জমিকে ভাগ করে নিতে হবে। দুইটি প্লটের মাঝে ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হবে জলনিকাশি ও সেচের জন্য। প্লট মাটি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখা দরকার। জমিতে সার মিশিয়ে ও মই দেওয়ার পর অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুতে বীজ বপন করতে হবে। জমি তৈরির সময় প্রতি একরে ১০ টন গোবর সার ও মূলসার হিসেবে ২৫০ কিলোগ্রাম সুপার ফসফেট ও ৬০ কিলোগ্রাম মিউরেট অফ পটাশ দিতে হবে। ছিটিয়ে বা সারি দিয়ে বীজ বোনা যেতে পারে। প্রতি একরে ১০ কিলোগ্রাম বীজের দরকার হয়। বীজ বপনের আগে মেথি বীজ কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পরিষ্কার জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতি কিলোগ্রাম বীজ ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে। সারিতে বীজ আড়াই সেন্টিমিটার গভীরে বসাতে হবে। বীজ বোনার পর মাটি চাপা দিতে হবে।
তারপর ৩০ থেকে ৪০ দিন পরে চারা পাঁচ থেকে সাত সেন্টিমিটার লম্বা হলে চাপান সার হিসাবে ৫০ কিলোগ্রাম ইউরিয়া জমিতে দিতে হবে। তারপর বীজ বোনার ৭০ থেকে ৮০ দিন পর জমিতে আবার ৫০ কিলোগ্রাম ইউরিয়া দ্বিতীয়বার চাপান সার হিসাবে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ঠিক পরেই জমিতে সেচও দিতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় চাপান সার দেওয়ার মাঝের সময়ে আবহাওয়া ও মাটির অবস্থা বুঝে হালকা সেচ দেওয়া যেতে পারে। বীজ বোনা থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত ১০০ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে। গাছ শুকোতে আরম্ভ করলে ও ফলের রং হালকা হলুদ হলে বুঝতে হবে ফসল তোলার সময় হয়ে গিয়েছে। গাছ গোড়া থেকে কাস্তে দিয়ে কেটে বা গোড়া-সহ উপড়ে তুলে নিতে হবে। তারপর পাকা মেঝেতে রেখে গাছ শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনো ফল লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ আলাদা করে নিতে হবে। প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কুইন্টাল মেথি বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে মেথি শাক হিসেবে কেটে নিলে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে প্রতি হেক্টরে ৫০০ কিলোগ্রাম শাক পাওয়া যায়।
[আরও পড়ুন: রুখা জমিতে কৃষিবিপ্লব, গাঁদা ফুটিয়ে বিপুল আয় বৃদ্ধ দম্পতির]
অন্যান্য মশলার মতোই মেথিতেও কাটুই পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঢলে পড়া রোগ, ধসা রোগের সংক্রমণও ঘটতে পারে। সেই অনুযায়ী প্রতিকার নিতে হবে। জমিতে নিয়মিত নজরদারি, পরিচর্যা করলে সামনের শীতে ভাল আয় করা যেতে পারে মেথি চাষ করে। তাহলে দেরি না করে এখনই জমি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। হাতে আর বেশি সময়ও নেই। জমি তৈরি করে উন্নত প্রজাতির বীজ সংগ্রহ নিতে পারেন চাষিরা।
The post আয় বাড়াতে অল্প জমিতেই করুন মেথি চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি appeared first on Sangbad Pratidin.