অপরাজিতা সেন: রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) মোকাবিলা করতে না পেরে এবার গোপনে বিকল্প রণনীতি নিচ্ছে বিরোধীরা। বিজেপি ঠিক করেছে তারা উগ্র হিন্দুত্বের নীতি বাড়াবে। তারা চাইছে মুসলিম ভোট কাটতে নামুক সিপিএম (CPM) এবং কংগ্রেস। তাহলে বিজেপির স্বার্থসিদ্ধি হবে। বামসূত্রে খবর, অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতার জন্য তারা এই ফর্মুলা ধরে এগনোর দিকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিও রাজ্যের বিশেষ কিছু অঞ্চলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ সূত্রে খবর, বাংলায় পিছনের দরজা দিয়ে রাজনীতি করতে মরিয়া বিজেপি (BJP)। জনসমর্থনে তৃণমূলকে হারানো যাবে না বুঝে তারা বিকল্প পথ নিচ্ছে।
রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালে দেশে বিজেপি তথা এনডিএর (NDA) আসন কমবে। তাই বিজেপি ঘাটতি পূরণে বাংলা-সহ কয়েকটি রাজ্য থেকে আসন বাড়াতে মরিয়া। বাংলায় জনগণের সমর্থনে তৃণমূলকে পাল্লা দেওয়া সম্ভব নয় বুঝে আপাতত অন্য নীতি তাদের। প্রথমত, এজেন্সি দিয়ে উত্ত্যক্ত করা। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করা। তৃতীয়ত, বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণে ভাগ করা। এই তৃতীয় অঙ্কটিতে বিজেপি এবার সিপিএম, রাজ্য কংগ্রেসেরও সহযোগিতা পাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: কার নির্দেশে দেওয়া হয়েছিল নিয়োগপত্র? জানতে পার্থ ও কল্যাণময়কে মুখোমুখি জেরা সিবিআইয়ের]
অঙ্ক অনুযায়ী, পুজোর পর থেকে বিজেপি এরাজ্যে উগ্র হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে নামবে। সিএএ ইস্যু ফিরিয়ে আনবে। হিন্দু ভোটারদের মধ্যে প্রচারের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি, আরএসএস। অন্যদিকে, মুসলিম ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে নামছে বাম-কং। মহম্মদ সেলিম এ বিষয়ে আরেকটি সংগঠনের সঙ্গেও যৌথ কর্মসূচিতে যাবেন, যেমন ভোটের আগে গিয়েছিলেন। আটটি জেলার বাছাই এলাকায় এ বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে। কিছু সংখ্যালঘু আপাত-অরাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠনদের প্রধানদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলা হবে। নভেম্বর থেকে এই কাজে আরও গতি বাড়বে। এমনিতে সিপিএম মুখে বিজেপির বিরোধিতা করে যাবে। মুসলিম ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবে। বিজেপিও চাইছে সিপিএমের এই চেষ্টা সফল হোক। কোথায়, কোন এলাকায়, কীভাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ দরকার, এটা অলিখিতভাবে এক অদৃশ্য যৌথশক্তি ঠিক করে ফেলছে বলে খবর। গোটা প্রক্রিয়াটি ঠিক হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক টিম থেকে।
সিপিএম সূত্র অবশ্য বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত ব্লুপ্রিন্টের কথা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, তারা নিজেদের মতো করে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াবে। কংগ্রেস এবং আর কয়েকটি দলকে নিয়ে মঞ্চ গড়বে। মজা হল, বিজেপি ঠিক এটাই চাইছে। এরা ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ব্যাংককে ভাগ করতে মরিয়া। একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন ও নেতাদের সঙ্গে ‘কিছু তাৎপর্যপূর্ণ’ লোকের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। যদিও বিজেপিরই একটি অংশ বলছে, তারা জানে যে এভাবে বাংলায় ভোট ভাগ কঠিন। কিন্তু, এই কাজের জন্য কোনও চেষ্টা ও রসদ বাকি রাখা হবে না বলেও একটি মহল থেকে আশ্বাস এসেছে। ফলে পুজোর পর সব রাজনৈতিক দলের সক্রিয়তা বাড়ার মধ্যেই বিজেপির স্বার্থসিদ্ধিতে সিপিএম, কংগ্রেস সংখ্যালঘু এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়াতে নামবে, এটা স্পষ্ট। কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারা অবশ্য এই প্লটের কথা মানতে নারাজ।
[আরও পড়ুন: কার নির্দেশে দেওয়া হয়েছিল নিয়োগপত্র? জানতে পার্থ ও কল্যাণময়কে মুখোমুখি জেরা সিবিআইয়ের]
সূত্রের খবর, দিল্লির কর্তাদের হিসাবে বাংলার কমবেশি ৩০ শতাংশ মুসলমান ভোটের মধ্যে ১০ শতাংশ বাম এবং কংগ্রেসকে দিয়ে কাটাতে হবে। আর ৭০ শতাংশ হিন্দু ভোটের মধ্যে উগ্র ধর্মীয় হাওয়া তুলে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভোট টার্গেট করছে বিজেপি। এর জন্য কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রককেও তাদের স্কিমগুলি দিয়ে অঙ্ক কষে কিছু সংগঠনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আবার এআইএফএফ-এর মতো আপাত অরাজনৈতিক ফুটবল সংস্থাকে দিয়েও তাদের স্বার্থে জনসংযোগে নামানো হচ্ছে। যেমন, এআইএফএফ ইতিমধ্যেই আইএফএ-কে চিঠি লিখে বলেছে, ‘খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচি’ চালু করতে হবে। তার জন্য আর্থিক বরাদ্দের কথাও বলা রয়েছে। বস্তুত, যে মডেলে খেলার মোড়কে জনসংযোগের চেষ্টা হচ্ছে, তা কার্যত আরএসএস-এর পুরনো মডেল। সংঘ ঘনিষ্ঠ কল্যাণ চৌবে সভাপতি হওয়ায় তাঁকে সামনে রেখে এসব কাজ সহজ হয়ে গিয়েছে। যদিও তারা বলবে, এতে রাজনীতি নেই। কিন্তু, বিভিন্ন মোড়কে এ ধরনের কাজের গতি বাড়াতে তৈরি বিজেপি। বাংলায় আরএসএস-এর সব শাখাকে আরও গতিশীল করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা মূলত সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে এক মুসলিম ধর্মীয় নেতা বলেন, ‘‘ওঁরা কথা বলেছেন। বসতেও চান। পুরনো পরিচিত। মুখের উপর না বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, বিজেপিকে হারাতে হিন্দু-মুসলমান যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির উচিত তৃণমূলকে ভোট দেওয়া। আমরা এখনও কোনও অবস্থান বদল করিনি। কিন্তু, এটাও ঠিক, কিছু কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। এই ক্ষত মেরামত না করলে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতারা সংখ্যালঘুদের কিছু অংশকে প্রভাবিত করলেও করতে পারেন।’’