‘ফাগুন বউ’-এর সাফল্য। জীবনের চড়াই-উতরাই। সবকিছু নিয়ে অকপট বিক্রম সাক্ষাৎকারের প্রাথমিক শর্ত ছিল সেই ২৯ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে কোনও কথা হবে না। বিক্রমের অনুরোধ ছিল, যে বিষয়টা যেহেতু এখনও বিচারাধীন, তিনি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তাই সাক্ষাৎকারের ফোকাস হবে তাঁর কাজ-টেলিভিশন, ‘ফাগুন বউ’ এবং সিনেমা। আর সেইসব কথা বলতে গিয়ে বিক্রমকে দেখাচ্ছিল ঝকঝকে রোদ্দুরের মতো! শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
[অচলাবস্থা কাটিয়ে চেনা ছন্দে স্টুডিওপাড়া, শুরু সিরিয়ালের শুটিং]
(টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির স্ট্রাইক শুরু হওয়ার দেড় সপ্তাহ আগে নেওয়া এই সাক্ষাৎকার)।
‘ফাগুন বউ’–এর সাফল্যে কেমন লাগছে?
এটা ঠিক শব্দ দিয়ে বোঝাতে পারব না। ইট’স আ ফিলিং। যে কোনও কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতা সবটাই তো একটা অনুভব, তো সেটা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে একটু কঠিন হয়ে যায়। যদিও অনেকে খুব ভাল পারে। এটুকু জানি, ইট ফিল্স গুড। আমি সবসময় অ্যাক্টর হতে চেয়েছিলাম। বহু মানুষের কাছ থেকে ভালবাসা পেতে চেয়েছিলাম। এটাই আমার প্রাথমিক কারণ ছিল অভিনেতা হতে চাওয়ার। আর ইনিশিয়াল ফেজে সেই ভালবাসাটা যে ধারাবাহিক ভাবে পেয়েছি তা নয়। সেইটা আরও ভালবাসা পাওয়ার খিদে বাড়িয়ে দেয়। যখন সাফল্য সঙ্গে থাকে না, তখন তুমি সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারবে কতটা সাফল্য চাও। যখন দর্শকের থেকে ভালবাসা পাওয়া যায় না, তখনই সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় কতটা পেতে চাও। তখনই ভালবাসার মূল্যটা বোঝা যায়।
বিক্রম জীবনের এই পর্বে দর্শক আপনাকে এতটা ভালবাসা দেবে ভেবেছিলেন?
অভিনেতাদের জন্য শুধু নয়, যে কোনও আর্ট ফর্মেই ওইভাবে ভেবে কিছু হয় না। একটা প্রোজেক্টে বিশ্বাস করে একশো বা দু’শো শতাংশ দেওয়া যায়, বাকিটা দর্শকের হাতে। আমি আমারটুকুই করতে পারি। আমি দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যদি আমার কেরিয়ারের লাস্ট সাড়ে তিন বছরের কথা বলি, ২০১৫ থেকে ধরলে তিনটে ফিল্ম রিলিজ আর দু’টো টিভি সিরিয়াল। সবক’টাই বেশ ভাল করেছে। ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘খোঁজ’, ‘মেঘনাদ বধ রহস্য’ তিনটে সিনেমাই বেশ ভাল চলেছে। আর ‘ইচ্ছেনদী’, ওয়াজ হিউজ হিট। এখন ‘ফাগুন বউ’-ও সেইদিকে যাচ্ছে। আমিও দর্শকের ভালবাসা পেয়েছি। গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সাত সপ্তাহ ‘ফাগুন বউ’ স্টার জলসায় হায়েস্ট টিআরপি পেয়েছে। আর বাকি দু’সপ্তাহ আমরা দু’নম্বরে ছিলাম। অত্যন্ত ধারাবাহিক এই সাফল্য। ইট’স আ গ্রেট ফিলিং (হাসি)।
সাম্প্রতিক অতীতেও তো আপনার ওপর সাধারণ মানুষের মনোভাব অতটা পজিটিভ ছিল না। সেই সাধারণ মানুষই সিরিয়ালে আপনাকে এতটা গ্রহণ করবে এবং আপনি কামব্যাক করতে পারবেন, সেটা নিয়ে কি কনফিডেন্ট ছিলেন?
আমি সত্যিই জানি না দর্শকের বা জেনারেল মাস-এর মনোভাব কী ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লোকের কথা শুনে বা পড়ে মাস-এর মনোভাব ডিসাইড করতে বসলে সেটা সে সবসময় ঠিক হবে, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ভুলও হতে পারে। সুতরাং আমি জানতাম না। এত বড় একটা পপুলেশন পশ্চিমবঙ্গের, বাঙালি এত মানুষ, ইট’স ভেরি ডিফিকাল্ট যে, কিছু লোকের রিঅ্যাকশন দেখে পুরোটা বোঝা যাবে। এটা নিয়ে খুব একটা যে ভেবেছি, তাও না।
এই যে সেকেন্ড ইনিংসে নায়ক হিসেবে টেলিভিশনে দর্শক আবার আপনাকে গ্রহণ করল…
প্লিজ, একটু দাঁড়ান, আমি আমার কেরিয়ারটাকে ফার্স্ট ইনিংস বা সেকেন্ড ইনিংস হিসেবে দেখি না। একটাই কেরিয়ার। এবং আমি খুব পরিশ্রম করি। গত আট বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে আমার কাজ মানুষের ভাল লাগে। সেই চেষ্টার মধ্যে ফার্স্ট, সেকেন্ড বা থার্ড ইনিংস হয় না। যেদিন কাজ বা জীবন শেষ হবে, সেদিন আমার ইনিংস শেষ হবে।
তাহলে কী মনে হয় পাবলিক মেমরি কি খুব শর্ট? এই মানুষগুলোর মনোভাবই তো একসময় বিরূপ ছিল আপনার প্রতি। তারাই আপনার ভিউয়ার্স হয়ে আজ টিআরপি বৃদ্ধি কারণ।
এর উত্তর আমি দিতে পারব না, অডিয়েন্সই দেবে। আমি এইটুকু জানি, আমার কেরিয়ারগ্রাফকে একটা হিসেবেই ভাবি। ২০১৫-র আগে পর্যন্ত কেরিয়ার বিরাট কিছু ছিল না। অবভিয়াসলি ‘সাতপাকে বাঁধা’ বিরাট হিট ছিল। ব্যাক টু ব্যাক কিছু ছবি করেছি। সেইগুলো বিরাট সফল ছিল, তা নয়। কিন্তু ২০১৫-র পর ছবিটা বদলায়। আমার কাজ বাহবা পায় এবং ছবিগুলোও চলেছে। গড হ্যাজ বিন ভেরি কাইন্ড টু মি ২০১৫-র পর থেকে। ঈশ্বরের আশীর্বাদেই ‘ফাগুন বউ’তেও লোকে আমাকে পছন্দ করছে। আমাকে যেমন ‘জিকো’র মতো ডার্ক রোলে লোকে এক্সপেক্ট করেনি, তেমনই ‘ফাগুন বউ’-এর ‘রোদ্দুর’ হিসেবেও হয়তো ভাবেনি। আমার প্রাইমারি ইমেজ ওই ধাঁচের না। রোদ্দুর বড্ড বেশি ভাল। আমরা তো সবাই রক্তমাংসের মানুষ, এত ভাল তো সাধারণত হয় না। এত ফরগিভিং, এত অ্যাডজাস্টিং! যাকে বলে পারফেক্ট। রোদ্দুরের একমাত্র খুঁত হল, ও খুব ইমোশনাল। আমার জন্য এই চরিত্রটা করা চ্যালেঞ্জ ছিল। এটা ফিল্ম নয় যে, ১৫ দিনের জন্য একটা চরিত্রে ঢুকলাম, তারপর বেরিয়ে এলাম। টেলিভিশন করা মানে যে ক’দিন ওই সিরিয়াল চলবে, দীর্ঘ সময় ধরে চরিত্রটা বেঁচে থাকবে। ‘ইচ্ছেনদী’র ক্ষেত্রে সুবিধা ছিল, ‘অনুরাগ’ অনেকটাই আমার মতো ছিল। রোদ্দুর মানুষ হিসেবে বড্ড ভাল, হয়তো এমন হয়। কিন্তু ওর মতো এতটা সেল্ফলেস আমি নই। এই পৃথিবীতে আমাদের কাউকে এতটা সেল্ফলেস থাকতে দেওয়াও হয় না। ছোটবেলায় যদি ওইরকম থাকিও, পৃথিবী ওইরকম থাকতে দেবে না। অনেক অফার ফিরিয়ে আমি এই প্রোজেক্টে হ্যাঁ বলেছি। কারণ আমার মনে হয়েছিল যে স্ট্যান্ডার্ড-এর কাজ আমি করেছি, তার সঙ্গে যায় এটা।
‘ফাগুন বউ’–এর এই সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব কাকে দেবেন?
ডেফিনিটলি লীনাদিকে (গঙ্গোপাধ্যায়)। যিনি এই শোয়ের প্রযোজক এবং লেখক। একজনকে দূরদর্শী হতে হয়, যেটা লীনাদির আছে। আমার কেরিয়ারে খুব বড় অবদান আছে ওঁর, মানে লীনাদি-শৈবালদার। এমনকী ‘সাতপাকে বাঁধা’র প্রথমদিকটাও লীনাদির লেখা ছিল। বহুদিনের পরিচয়, সেই প্রথমদিন অডিশন দিতে যাওয়ার সময় থেকে।
ঐন্দ্রিলা আর আপনার জুটি তো হিট। অঙ্কুশ আপনাদের হিংসে করেন না?
না, একেবারেই নেই। অঙ্কুশ আমাদের সিরিয়াল দেখে যদি বাড়িতে থাকে। কেমিস্ট্রি ভাল না লাগলেও জানায়। ও বেশ ক্রিটিক্যাল। আমরা একটা পরিবারের মতো।
টিআরপি যুদ্ধ না জীবনযুদ্ধ কোনটা বেশি কঠিন মনে হয়?
টিআরপি যুদ্ধ অনেকটাই জীবন যুদ্ধের মতো। ডিফিকাল্টিস আসবে, খারাপ সময় আসবে, টিআরপি পড়বে, আবার উঠবে, ফলে আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনটা কি আর আগের মতো স্বাধীন আছে?
না, কিছু পরাধীনতা অবভিয়াসলি আছে। ওই যে আগে আপনাকে বলেছিলাম, যখন জন্মেছিলাম ভগবানকে দিয়ে তো লিখিয়ে আনতে পারিনি, যে আমার জীবনে শুধু ভালটাই হবে। ভাল-খারাপ মিলিয়ে মিশিয়েই সবার জীবন।
নিজের জন্য কী কী রেসট্রিকশন এনেছেন জীবনে?
ওইভাবে ভাবতে গেলে তো, বেঁচে আছি, সেটাও আশ্চর্যের।
আর কি গাড়ি চালান?
শুটিংয়ের প্রয়োজনে, শট দিতে গেলে গাড়ি চালাতে তো হয় মাঝেমধ্যে। তার বাইরে খুব প্রয়োজন না পড়লে খুব একটা যে গাড়ি চালানো হয়েছে তেমন নয়।
আর নতুন কাজ?
কথা হচ্ছে, ফাইনাল না হলে বলা উচিত নয়। এক ধরনের কাজ করেছি এতদিন, সেই কনসিসটেন্সিটা রাখতে চাই। গর্ব করে বলতে পারি এই সাড়ে তিন বছরে যেক’টা কাজ করেছি সবক’টা কাজ মানুষের খুব পছন্দ হয়েছে। মানুষ ভালবেসেছে। খুব কম মানুষেরই হয়তো এমন হয়েছে। অ্যান্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইট। তাতে কম কাজ হলে হোক। বেছে কাজ করব কিন্তু ভাল কাজ।
রিসেন্টলি একটা নিয়ম হচ্ছে যে, দশটার মধ্যে সিরিয়াল শুট প্যাক আপ করতে হবে। এই বিষয়ে কী বলবেন?
এটা তো ভালই। দশটার মধ্যে প্যাক আপ হলে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম পাওয়া যায়। আমি যে হাউসে কাজ করি সেখানে চাপ তুলনায় কম। কিন্তু ওভারঅল, এমন হলে ফিরে বাড়ির
মানুষের মুখ দেখা যায়। আবার অন্যদিকটা হচ্ছে, আমাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। সাতদিন টেলিকাস্ট করতে গেলে প্রোডাকশন হাউসকে ওই সময়ের মধ্যে কাজ তুলতে হবে। কাজেই দু’টো দিকই আছে। আমাদের আরও বেশি কমিটেড হতে হবে। ওই বিশ্রামটা পেতে গেলে। সব বার্ডেন প্রযোজকের একার নয়।
[শুটিংয়ে ফেরার আশায় দিন গুনছে ‘রাসমণি’ দিতিপ্রিয়া]
The post টিআরপি যুদ্ধ অনেকটাই জীবনযুদ্ধের মতো, কেন এ কথা বিক্রমের মুখে? appeared first on Sangbad Pratidin.