সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিজের মতো কাজ করার অধিকার ছিল না। তার জেরেই চূড়ান্ত অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টা কেশসজ্জা শিল্পীর। এমনই অভিযোগে উত্তাল টলিপাড়া। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, দামিনী বেণী বসু, সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও সুদেষ্ণা রায়।
জানা গিয়েছে, শনিবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কেশসজ্জা শিল্পী। তাঁর মেয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শিল্পীকে। বর্তমানে বাড়িতে রয়েছেন তিনি। তবে এখনও ট্রমায় রয়েছেন। ইতিমধ্যেই হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানান শিল্পীর মেয়ে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রথমে স্বস্তিকা লেখেন, "আরও কয়েকটা গিল্ড হোক। আরও লোকজন ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানুষের পেটে লাথি মেরে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিক।"
এর পরই আবার অভিনেত্রী একটি অডিও ক্লিপ শেয়ার করে লেখেন, "ছাড়া হবে না। কর্মক্ষেত্রে কোনও রকম হেনস্তা আর হজম করা হবে না। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে জমিদারি প্রথা বিলোপ হবার সময় হয়েছে।" স্বস্তিকা জানান, অডিও ক্লিপটি সেই কেশসজ্জা শিল্পীর যিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। সঠিক সময় মেয়ে তাঁকে বাঁচিয়ে দেয়। ফেডারেশনকে ধিক্কারও জানান অভিনেত্রী।
টলিপাড়ায় হেনস্তা রুখতে কমিটি গড়ার ডাক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে উইমেনস’ ফোরাম ফর স্ক্রিন ওয়ার্কাস (Womens’ Forum for Screen Workers+)। এই ফোরামের হ্যাশট্যাগ দিয়েই দামিনী বেণী বসু লেখেন, "যারা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন-টাকে নিয়ম বলে চালিয়েই নিজেদের রাজা-রানী ভাবছেন, মানুষের পেটে লাথি মেরে, ভয় কায়েম করে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে, একঘরে কোণঠাসা করে, চুপ করিয়ে রেখে বছরের পর বছর ভাবছেন - এমনি করে যায় যদি দিন যাক না - ভুলে যাবেন না দাদা-দিদিরা, সময়ের ঘড়ির কাঁটা আপনার দিকে তাক করে আছে। ঠিক যেমন আমরাও। টাইমস আপ! ডিয়ার টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি। (কেশসজ্জা শিল্পীর নাম), তুই আর একা নোস।
পরিচালক সুদেষ্ণা রায় মনে করেন পুরো বিষয়টা নিয়ম বহির্ভূত। এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "নিজের উদ্যোগে কাজ নিতে পারবে না। এটা কখনও কাউকে বলা যায় না। সম্পূর্ণ বেআইনি।" সোশাল মিডিয়ায় প্রথম থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার সুদীপ্তা চক্রবর্তী। রবিবার ফেসবুকে (ভেরিফায়েড পেজ থেকে নয়) অভিনেত্রী লেখেন, '২০০২ সাল... আমার শুটিং অ্যাটেনডেন্ট হয়ে ফিল্ম / টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করে (কেশসজ্জা শিল্পীর নাম) । তার পর চুল বাঁধার কাজ শিখে, হেয়ার ড্রেসার গিল্ডের কার্ড নিয়ে পেশাদার হেয়ার ড্রেসার হয়। ২২ বছর ধরে চিনি ওকে। ওর স্বামী বহুদিন ধরে অসুস্থ। চুল বাঁধার কাজ করেই ও সংসারটা একা টানে। ওর প্রতি হওয়া যে কোনও অন্যায়ে ওর পাশে থাকব আমি। আগামীকাল 'বিনোদিনী অপেরা'র শো আছে। সেখানেও কাজ করার কথা ওর। কাল আসতে পারবে কি না জানি না। আগে ও সুস্থ হয়ে উঠুক। আগুনটা ধরে গেলে কী হতে পারত, সেটা ভেবে এখনো শিউরে উঠছি। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ আমি করবই। কেউ আটকাতে পারবে না।"
এদিকে শোনা যাচ্ছে, কেশসজ্জা শিল্পী নাকি আবারও কাজে যোগ দিতে পারবেন বলেই জানিয়েছেন। যে ছবিতে তাঁর কাজ কাজ করার কথা ছিল, সেই পরিচালকও চান, শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু তার জন্য নাকি সংগঠনের ছাড়পত্র প্রয়োজন। যা এখনও পাননি শিল্পী।