সন্দীপ্তা ভঞ্জ: হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে এবার রচনা বন্দোপাধ্যায় বনাম লকেট চট্টোপাধ্যায়। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে তৃণমূল বনাম বিজেপির যে একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, তা ইতিমধ্যেই আন্দাজ করছে রাজনৈতিক মহল। দুজনেই টলিউড ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর দৌলতে রচনা বর্তমানে টেলিদর্শকদের অন্দরমহলের সুপারহিট অতিথি। অন্যদিকে সিনেইন্ডাস্ট্রি থেকে বছর দশেক দূরে থাকলেও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে মনে রেখেছে গ্রামবাংলা। নেত্রী হিসেবেও তিনি পরিচিতি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। এই ‘নেত্রী অভিনেত্রী’দের লড়াই নিয়ে কী বলছে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহল? সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর কাছে মুখ খুললেন তারকারা।
শ্রীলেখা মিত্রর স্পষ্ট মন্তব্য, “হুগলির মানুষই বিচার করুক। আমি প্রশ্ন রাখব ভোটারদের কাছে, এই ‘১৭৪ ধারা’ মন্তব্যের পরও ওঁরা কি কোনও অভিনেত্রীকে ভোট দেবেন? নাকি দরকারে যাঁকে ডাকলে পাবেন, এরকম কাউকে ভোটটা দেবেন? ব্যস এটুকুই!”
সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও বিজেপি ছাড়েননি পার্নো মিত্র, সম্প্রতি নিজমুখেই সেকথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী। হুগলির ময়দানে রচনা বনাম লকেটের মেগাফাইট নিয়ে তাঁর কী মন্তব্য? রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গ এড়িয়ে পার্নো বলছেন, “একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন লকেটদির পরিচিতি অনেক বেশি। উনি তো ইন্ডাস্ট্রিতে নেই দশ বছরেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। ভালো কাজ করেছেন সাংসদ হিসেবে। আমি নিজে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাব ওঁকে।”
অভিনেত্রী ইশা সাহা বলছেন, “সত্যি বলতে কী, যদি অন্য কেউ দাঁড়াতেন, তাঁদের আমি চিনতাম না। তবে এই দুজনকে চিনি। কাজ করে মনে হয়েছে, মানুষগুলো ভালো। হুগলির মানুষদের যদি এতে ভালো হয়, তাহলে ভালো। রাজনীতিকদের ভোট দিয়ে এই জন্যই তো প্রতিনিধি করা, তাই না! আমার মনে হয়, ওঁরা দুজন দুজনকে খুব ভালো চেনে। সুসম্পর্কও হয়তো রয়েছে। একে-অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেন, তবে দিনের শেষে রাজনীতিতে সৌজন্যতাবোধ খুব প্রয়োজন। যেই জিতুক না কেন, আশা করি হুগলির ভালো হবে।”
বরাবরই রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সরব কৌশিক সেন। সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর কাছে তাঁর মন্তব্য, “হুগলিতে ‘অভিনেত্রী বনাম অভিনেত্রীর লড়াই’ ট্যাগে আপত্তি রয়েছে আমার প্রথমত। দুজনকে অভিনেত্রী হিসেবেই সেরকম নম্বর দিতে আমি রাজি নই। এঁদের দুজনের কাউকেই আমি অভিনেত্রী বলে মনে করি না। অভিনয় করার জন্য যে ডেডিকেশন বা ট্যালেন্টের প্রয়োজন হয়, এঁদের কারোরই সেটা ছিল বলে আমার মনে হয় না। অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাটাও ছিল না, নইলে আর রাজনীতি করতে যাবেন কেন?”
কৌশিক সেনের সংযোজন, “দিদি নম্বর ওয়ান ছাড়া রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর কী প্রমিনেন্সি আছে? বহুদিন কোনও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রচনাকে দেখা যায় না। কিংবা যখন কাজ করেছেন, তখনই বা সেরকম কোনও কাজ করেছেন বলে আমার জানা নেই। লকেটও তাই। বহু বছর আগে অভিনয় থেকে দূরে। বহু সিরিয়াল, টেলিফিল্মে অভিনয় করতেন, কিন্তু সেরকম কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা কেউ উল্লেখ করতে পারবেন? আমার কাছে বর্তমানে দুজনেই রাজনীতিবিদ। তাঁরা কী করবেন না করবেন, সেটা তাঁদের দল বুঝে নেবে। এদের ভোটের লড়াইয়ের সঙ্গে আমি টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে জড়াতে রাজি নই। ভোটারদের উদ্দেশে আমার একটাই বার্তা, কে অভিনয় করতেন না করতেন, সেটা না ভেবে রাজনৈতিক সচেতন হয়ে ভোট দিন। যে যেই রাজনৈতিক দলটার প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের কাজের কথা মাথায় রেখে ভোট দিন।”
সৌরসেনী মৈত্রর মন্তব্য, “দুজনেই জনপ্রিয়। লকেটদি একসময়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তাছাড়া রচনাদি ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ করছেন বহু বছর ধরে। দূর-দূরান্তের মহিলারা আসেন সেখানে নিজেদের সংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরতে। ওঁরা একসঙ্গে যেহেতু কাজ করেছেন, সেদিক থেকে আমার মনে হয় ওঁদের দুজনের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো। দুজনেই প্রার্থী হিসেবে ভালো। তবে আমার একটা বক্তব্য, যেই সাংসদ পদে আসুন না কেন, তিনি যেন কাজটা করেন।”