shono
Advertisement

ছবি এঁকে প্রাপ্তি সত্যজিতের সই, পরিচালকের জন্মদিনে স্মৃতিমেদুর অনীক

'অনুপ্রেরণা সত্যজিতের আঁকা', বললেন অনীক। The post ছবি এঁকে প্রাপ্তি সত্যজিতের সই, পরিচালকের জন্মদিনে স্মৃতিমেদুর অনীক appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 05:48 PM May 02, 2019Updated: 06:29 PM May 02, 2019

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দু’বার সাক্ষাৎ হয়েছিল অনীক দত্তর। তাঁকে তখন কয়েকটি কথা বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই কথাগুলি আজও ভুলতে পারেননি অনীক। কিংবদন্তি চিত্রপরিচালকের জন্মদিনে  সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তিনি। শুনলেন বিশাখা পাল

Advertisement

আমার বাবার বন্ধু ছিলেন শ্যামল সেন। আর্টিস্ট। ওনাকে আমি মংলু কাকু বলে ডাকতাম। তাঁর সূত্র ধরেই ছোটবেলায় একবার সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আমি ছোটবেলা থেকে আঁকাজোঁকা করতাম। সেটা হঠাৎ ওনার চোখে পড়ে যায়। বাঙাল ভাষায় কথা বলতেন তিনি। বাবাকে বলেছিলেন, “তুই কী করতাসস? রংটং কিনা দে। এটাই ওর করা উচিত।” আমার মনে আছে, আমি একটা ছবি এঁকেছিলাম। সেটা উনি বাঁধিয়ে নিয়ে আসেন। তখন আমি ভীষণভাবে সত্যজিৎবাবুর ইলাস্ট্রেশন দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবিত। ততদিনে ‘বাদশাহী আংটি’ ও অন্য কয়েকটি বই বেরিয়ে গেছে। সন্দেশেও ইলাস্ট্রেশন বেরিয়েছে। তার প্রভাব আমার উপর পড়েছিল। সেটা দেখে মংলু কাকু বলেছিলেন, “কি রে, তোর এসব ভাল লাগে?” আমি বলেছিলাম, “লাগে।” উনি জিজ্ঞাসা করেন, “দেখা করতে যাবি?” আমি তো এক পায়ে রাজি।

তখন তিনি কী মাপের মানুষ, অতটা আমার ধারণা ছিল না। শুধু দুটো কথা জানতাম। উনি ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’-এর নির্মাতা এবং ফেলুদার সৃষ্টিকর্তা। আর তার সাথে সাথে তাঁর আঁকাগুলো আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আমি ওনার ইলাস্ট্রেশন আর আঁকার খুব ফ্যান ছিলাম। সেই সূত্রে মংলুকাকু আমায় নিয়ে গেলেন। আগেই বলেছিলেন, “গিয়েই একটা পেন্নাম ঠুকে ফেলবি।” আমি তাই করেছিলাম। কিছুক্ষণ কথা হল। উনি আস্তে আস্তেই কথা বলতেন। যেহেতু আমি তখন জানতাম না উনি কত বড় মাপের মানুষ, তাই খুব যে ভয়ে ভযে গিয়েছিলাম, তা নয়। কিন্তু ওরকম উচ্চতা দেখে আর কণ্ঠস্বর শুনে একটু আড়ষ্টতা এসেছিল।

[ আরও পড়ুন: প্রতিশ্রুতিই সার, না পাওয়ার ক্ষোভ উগরে ব়্যাপ রূপান্তরকামীদের ]

আমি আমার ড্রয়িংবুকটা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি দেখে হাসলেন। বললেন, “বাবুও এই রকম ছবি আঁকে।” কারণ আমার সাবজেক্টগুলোও ওই রকমই ছিল। মংলু কাকুকে বলেছিলেন, “ওকে কোনওভাবে গাইড করবে না। আঁকার স্কুলটুলে যেন না যায়। নিজে থেকে যেটা আসে, সেটাই করুক।” একটা আঁকার স্কুলে আমিও দু’একদিন গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ওসব ভাল লাগত না। সার দিয়ে বসে আঁকা, এখন আঁকো বললে কাগজে দাগ কাটতে শুরু করা আমার পছন্দ ছিল না। উনি না বললে হয়তো স্কুলে আমায় যেতে হত। সেটা থেকে বেঁচে গেলাম।

উনি আমাকে একটা ছবির মধ্যে ‘শ্রীমান অনীককে সত্যজিৎ রায়’ লিখে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন। ছবিটি আমি শো অফ করার জন্য স্কুলে নিয়ে যাই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ছবিটি হারিয়ে যায়। আমার জীবনে যে’কটি জিনিস হারিয়েছি তার মধ্যে এটি বোধহয় সবচেয়ে মূল্যবান। কেউ সেটা নিয়ে নিয়েছিল কিনা জানি না। কিন্তু তার সই করা সেই ছবিটি আজও আমার মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে।

এর পরেও একবার সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ এসেছিল আমার। আমার দিদিমা (চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের স্ত্রী) আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর কাছে। অবজার্ভার হিসেবে কাজ করার কথা হয়েছিল তখন। কিন্তু নিজের দোষে আমি সেটা করতে পারিনি। সেইসময় আমি ছবি করব বলে স্থির করেছি। তখন সত্যজিৎ রায় অসুস্থ। সেই অসুস্থতার জন্যই হয়তো দিদিমা দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অসুস্থতা ঝেড়ে ফেলে ততদিনে তিনি ‘ঘরে বাইরে’ বানাচ্ছেন।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমার কাউকেই অ্যাসিস্ট করা হয়নি। আমি নিজেই ছবি আরম্ভ করেছিলাম। অনেকটা ওনার মতো করেই শুরু করেছিলাম কাজ। আমিও অনেক ছোটখাট নন ফিকশনাল কাজ করতে করতে হাত পাকিয়েছিলাম সিনেমায়। কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে শিখিনি। কারণ ওনার একটা কথা আমি আজও ভুলতে পারিনি- ‘আঁকার স্কুলে যেন না যায়।’ তাই পরেও স্কুলের দিকে পা বাড়াইনি।

[ আরও পড়ুন: প্রয়াত লোকশিল্পী অমর পাল, শোকস্তব্ধ বাংলার সংস্কৃতি জগৎ ]

The post ছবি এঁকে প্রাপ্তি সত্যজিতের সই, পরিচালকের জন্মদিনে স্মৃতিমেদুর অনীক appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement