সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উন্নাও মামলায় এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার আদালত খোলার পরেই ধর্ষণের ঘটনা থেকে গাড়ি দুর্ঘটনা সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে চান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈই। সিবিআইকে এই সমস্ত বিষয়ের তদন্ত সংক্রান্ত তথ্য আদালতের কাছে পেশ করতে বলেন। তদন্তকারী আধিকারিককে দুপুর ১২টার মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলেন। পাশাপাশি জানিয়ে দেন ধর্ষণ থেকে দুর্ঘটনা, সবগুলি মামলাই উত্তরপ্রদেশের বাইরে অন্য রাজ্যের আদালতে চালাতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১২ তারিখে তাঁকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তা কেন পেতে দেরি হল। তাও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চান তিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে লিখিতভাবে কারণ জানানোরও নির্দেশ দেন। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরই অভিযুক্ত কুলদীপ সেনেগারকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করল বিজেপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘোষণা করে তারা।পাশাপাশি ধর্ষিতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই মহিলা-সহ তিন পুলিশকর্মীকে বহিষ্কার করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড চপার দুর্নীতি মামলায় বেঁচে উঠল ‘মৃত’ সাক্ষী]
সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান, আজ দুপুর ১২টার মধ্যে তদন্তকারী আধিকারিক ও সিবিআই অধিকর্তার পক্ষে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তাঁরা লখনউতে আছেন। তাই তাঁদের শুক্রবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক। কিন্তু, সেই আবেদনে সাড়া দেননি প্রধান বিচারপতি। শুধু ১২ টার জায়গায় দুপুর দুটোর সময় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
রবিবার জেলবন্দি কাকাকে দেখতে রায়বরেলির জেলে যাচ্ছিলেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। সঙ্গে ছিলেন দুই আত্মীয় ও আইনজীবী। কিন্তু, রাস্তায় নম্বর প্লেটে কালো কালি লাগানো একটি ট্রাক উলটোদিক থেকে এসে তাঁদের গাড়িকে ধাক্কা মারে। এর জেরে মৃত্যু হয় ধর্ষিতার দুই আত্মীয়ের। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। দুর্ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির পাশাপাশি সংসদের ভিতরে ও বাইরে তীব্র প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে বিরোধী দলগুলি। অস্বস্তিতে পড়ে অভিযুক্ত বিধায়ক কুলদীপ সিং সেনেগারের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে বিজেপিও। যোগী প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। আর সেনেগারকে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে দাবি করেন উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিং৷ তিনি সাফ জানান, দল ধর্ষিতার পরিবারের সঙ্গেই রয়েছে৷ এক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্তের কোনও পরিবর্তন হবে না৷
[আরও পড়ুন: থামছে না গণপিটুনি, পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আসরে অমিত শাহ]
এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই জানা যায় নিরাপত্তার আবেদন জানিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছিলেন ধর্ষিতা। ওই চিঠিতে জেলবন্দি বিধায়ক কুলদীপ সেনেগার তাঁদের প্রাণে মারার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু, ১২ তারিখ চিঠি পাঠালেও তা প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছায়নি। বিষয়টি জানতে পেরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন রঞ্জন গগৈ। উন্নাওয়ের নির্যাতিতা তাঁকে যে চিঠি লিখেছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ে কেন সেই চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছল না? বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে এই প্রশ্ন করেন৷ ক্ষোভের সুরে সাফ বলেন, “মঙ্গলবার এই চিঠির কথা আমি জানতে পেরেছি৷ তবে এখনও চিঠি চোখে দেখিনি৷” জানান, বৃহস্পতিবার আবার এই মামলা শুনবেন৷ আজ সেই কথা মতো আদালত খুলতেই এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।