দেবব্রত মণ্ডল, ক্যানিং: ঘরের কচ্ছপ ঘরে ফেরানো যে কতটা কঠিন, তা আজ হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন দুই বাংলার বনকর্তারা! এতটাই, যে গত দেড় মাস ধরে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের বইয়ে মুখ গুঁজে রয়েছেন ব্যাঘ্র প্রকল্পের জাঁদরেল সব আধিকারিক। না হলে যে লক্ষ লক্ষ টাকার গবেষণার কাজটাই মাঠে মারা যাবে!
বিষয়টা খুলে বলা যাক! চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৩৭০টি অত্যন্ত বিরল প্রজাতির বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপকে (Batagur baska Tortoise) সুন্দরবনের খাঁড়িগুলিতে ছাড়া হয়েছিল ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফ থেকে। যার মধ্যে ১৮টি কচ্ছপের শরীরে বসানো হয়েছিল জিপিএস ট্রান্সমিটার। ‘বাটাগুড় বাস্কা’ নিয়ে যে গবেষণা সুন্দরবনে চলছে, তার প্রধান হাতিয়ার মার্কিনি প্রযুক্তিতে তৈরি এই ট্রান্সমিটার। যার সাহায্যে এই কচ্ছপ সুন্দরবনের জঙ্গলের কত গভীর জলে থাকে, কী খায়, কোন সময় প্রজনন শুরু হয় এবং সেজন্য কত পথ যাতায়াত করে, তা জানা যাবে। বিপত্তিটা বাঁধে মাসখানেক পর। গহীন জঙ্গলের খাঁড়ি সাঁতরে বেশ কিছু কচ্ছপ যায় বাংলাদেশের সুন্দরবনের নদীতে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি একটি কচ্ছপ ধরা পড়ে সে দেশের মৎস্যজীবীদের জালে। পরবর্তীতে আরেকটি কচ্ছপ ধরা পড়ে। ধরা পড়া কচ্ছপের শরীরে জিপিএস ট্রান্সমিটার দেখে বাংলাদেশ বন দপ্তরের ব্যাঘ্র প্রকল্প কার্যালয়ে মৎস্যজীবীরা সেগুলি জমা দেন। আপাতত সেখানকার করমজল রেঞ্জ অফিসে রাখা আছে কচ্ছপ দু’টি।
[আরও পড়ুন: ৫ হাসপাতালে ১৪ ঘণ্টা ধরে ঘুরেও মিলল না চিকিৎসা, দুর্গাপুরে পথেই মৃত্যু জখম বৃদ্ধের]
ভারত-সহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশও এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম শরিক। তবে সুন্দরবনের নদীতে ট্রান্সমিটার বসানো কচ্ছপ প্রথম ভারতের তরফ থেকেই ছাড়া হয়। এ রাজ্যের এক বনকর্তা জানাচ্ছেন, “ছাড়ার সময় নিয়ম মেনে কচ্ছপের শরীরে বসানো জিপিএস ট্রান্সমিটার যন্ত্রের উপর নির্দিষ্ট কোড নম্বর ও যোগাযোগের ফোন নম্বর উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ফোন নাম্বারে ফোন করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগও করে বাংলাদেশ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। তাতেই আমরা জানতে পারি প্রজেক্টের সদস্য দুই কচ্ছপের সীমান্ত পেরিয়ে সাঁতরে বাংলাদেশ পৌঁছে যাওয়ার কথা।”
বাংলাদেশ থেকে আসা ফোনে বিষয়টি জানতে পেরে নয়াদিল্লির তরফ থেকে ঢাকাকে জানানো হয়, এই কচ্ছপদু’টি এদেশের গবেষণার অঙ্গ। এদের হাতে না পেলে গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণা অনেকটাই ব্যাহত হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভারতীয় বন দপ্তরের হাতে কচ্ছপ তুলে দেওয়ার আবেদনও করা হয়। যদিও, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অভিযোগ, ভারতের সেই আবেদনে এখনও উচ্চবাচ্চ্য করেনি বাংলাদেশ। এবার তাই ভারতীয় ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফ থেকে কচ্ছপ ফিরে পেতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। তবে কবে এই প্রত্যর্পণ করা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে বনকর্তারা।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপসকুমার দাস বলেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ কচ্ছপদু’টি ধরে রাখার কথা স্বীকার করলেও সেগুলি ভারতের হাতে কবে বা কখন তুলে দেওয়া হবে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ বিষয়টি অত সহজ নয়। ধরা পড়া কচ্ছপদু’টি অত্যন্ত বিরল বাটাগুড় বাস্কা প্রজাতির হওয়ায় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের আইনের জাল কাটিয়ে অন্য দেশের হাতে হস্তান্তর শুধু কঠিন নয়, অত্যন্ত জটিলও বটে! তার পরও অবশ্য যাবতীয় প্রোটোকল মেনে বাংলাদেশের কাছে এই কচ্ছপ ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ৫ হাসপাতালে ১৪ ঘণ্টা ধরে ঘুরেও মিলল না চিকিৎসা, দুর্গাপুরে পথেই মৃত্যু জখম বৃদ্ধের]
ঘরের কচ্ছপ ঘরে ফিরে এলেও বনকর্তাদের দুশ্চিন্তা কিন্তু কমছে না। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাটাগুড় বাস্কা নিয়ে ‘ভিশন ২০৩০’ তৈরি করেছে ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ফলে আগামী দিনে আরও বেশি এই প্রজাতির কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাঁড়িতে ছাড়া হবে। কিন্তু যদি ফের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তারা মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ে, তবে একই সমস্যা দেখা দেবে গবেষণায়।