অর্ণব আইচ: ‘সুন্দরী’র সঙ্গে পানশালায় আলাপ হয়েছিল প্রোমোটারের। একটু কথাবার্তা আর একসঙ্গে মদ্যপানের পরই রীতিমতো তিনি ‘সুন্দরী’র প্রেমে। কিন্তু রাত গভীর হতেই ভাঙল সেই ‘নারী’র প্রতি মোহ আর প্রেম।
সুন্দরী যে যুবতীই নয়! এতক্ষণ নারী মনে করে যার প্রেমে পড়েছিলেন, সে যে এক ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের। ব্যবসায়ীর ভুল ভাঙল তখনই, যখন তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে লুঠপাট চালাল ওই ‘বান্ধবী’র সঙ্গীরা। আর দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুর অঞ্চলে এই লুঠপাটের পিছনে যারা রয়েছে, তারা কলকাতার নতুন ট্রান্সজেন্ডার গ্যাংয়ের। নিউ আলিপুর থানার পুলিশ তদন্ত করে গ্রেপ্তার করল এই ট্রান্সজেন্ডার গ্যাংয়ের এক মাথা ‘পিঙ্কি’কে। তার কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে লুঠ হওয়া সোনার হার।
[আরওপড়ুন: মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির বিলে অবশেষে সই রাজ্যপালের]
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘটেছে এই ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার বেহালার এক প্রোমোটার মাঝেমধ্যেই যেতেন শেক্সপিয়র সরণির একটি পানশালায়। কখনও কখনও ওই ‘সুন্দরী’কে পানশালায় আসতে দেখতেন। প্রেমে মজেছিল মনে। তাই বৃহস্পতিবার যেচেই আলাপ করলেন ‘সুন্দরী’র সঙ্গে। সাড়া পেলেন তার। গভীর রাত পর্যন্ত একসঙ্গে গল্পগুজব আর মদ্যপান চলার সময়ও কিছু বুঝতে পারেননি ব্যবসায়ী। এমনকী, সামান্য ভারী গলাতেও হয়নি সন্দেহ। রাত বাড়তে ‘বান্ধবী’কে গাড়িতে তুলে, তাকে পাশে বসিয়ে ঘুরতে শুরু করে শহরের রাস্তায়। মাঝেমধ্যে ফোন আসছিল ‘বান্ধবী’র। হোয়াটসঅ্যাপও করছিল সে। কিন্তু মদিরায় চোখ জুড়িয়ে আসায় সেসব দিকে নজরও দেননি ব্যবসায়ী।
গভীর রাতে ‘বান্ধবী’টি বলে, এবার বাড়ি ফিরে যাবে। তখন রাত দু’টো পেরিয়েছে। তার কথায় চালক নিউ আলিপুরের একটি অপরিসর, নির্জন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে পৌঁছন। ব্যবসায়ীও খেয়াল করেননি যে, তাঁদের গাড়ির পিছু নিয়েছে অন্য একটি গাড়ি। সেই গাড়িটি এসে ব্যবসায়ীর গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ির ভিতর থেকে যারা নেমে আসে, তাদের দেখে নারী বলে মনে হলেও তারাও ট্রান্সজেন্ডার। ব্যবসায়ীর ‘সুন্দরী বান্ধবী’ ব্যবসায়ীকে ধরে রাস্তায় টেনে নামায়।
এর পর ওই ট্রান্সজেন্ডার গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রোমোটারের গলা থেকে তিন ভরির হার লুঠ করে পালায়। ব্যবসায়ী পরে এসে নিউ আলিপুর থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে এলাকা ও পানশালার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। গাড়িটিকে শনাক্ত করে তার চালককে জেরা করা হয়। জানা যায়, উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে ওই ট্রান্সজেন্ডারদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ পানিহাটিতে তল্লাশি চালিয়ে পিঙ্কি নামে ওই গ্যাংয়ের মাথাকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সোনার হার। ধৃতকে জেরা করে গ্যাংয়ের অন্যদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।