শুভজিৎ মণ্ডল: কাজটা সহজ ছিল না। লিঙ্গ পরিবর্তন করে ‘রক্ষণশীল’ সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যে কতটা চ্যালেঞ্জিং সেটা তিনি ভাল করেই জানেন। আজ তাঁর মতোই আরেক জনের সিদ্ধান্তে ‘অক্সিজেন’ পেয়েছেন মানবী মুখোপাধ্যায়। দেশের প্রথম রূপান্তরিত নারী অধ্যক্ষা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্যের সিদ্ধান্তে খুবই খুশি হয়েছেন মানবী। সঙ্গে রয়েছে আক্ষেপও, ‘এই সিদ্ধান্তটা বুদ্ধবাবুর আমলে হলে আরও ভাল হত।’
সুচেতনা ভট্টাচার্য (Suchetana Bhattacharjee) এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এখন থেকে ‘সুচেতন’ হিসাবে পরিচিত হতে চান। মানসিকভাবে তিনি পুরুষ, শারীরিক ভাবেও পুরুষ হতে চান। সেজন্য যা যা লড়াই করতে হোক, তিনি লড়তে প্রস্তুত। যা যা ঝড়ঝাপটা আসুক, তিনি অনড়।সুচেতনার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে মানবী বলছিলেন,”খুবই খুশি হয়েছি। সমাজের এই স্তরের মানুষগুলো যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা কিছুটা অক্সিজেন পাই। আসলে আমাদের সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ হিসাবে মনে করা হয়। তবে ইদানিং কিছু কিছু অক্সিজেন পাচ্ছি। সুপ্রিম কোর্টের রায়েও খানিকটা অক্সিজেন পেয়েছি।”
[আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামাস জঙ্গির গুলিতে নিহত ৪, বদলার আগুনে জ্বলছে ইজরায়েল]
বলতে বলতেই স্মৃতির সরণিতে চলে গেলেন মানবী (Manabi Mukhopadhyay)। তিনি নিজে রূপান্তরিত হয়েছিলেন বাম আমলে। সেসময় তাঁকে যে কম হেনস্তার শিকার হতে হয়নি, সেটা অকপটে বলে দিলেন অধ্যাপিকা। বলছিলেন,”আমাকে তো কম হেনস্তা হতে হয়নি। চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আমার লিঙ্গ বদল করা হয়নি। বাড়ি থেকে অনেক দূরে ঝাড়গ্রামে চাকরি করতে যেতে হত। সেখানে বাড়ি ভাঁড়াও জোগাড় করতে পারিনি। আরও কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে।” সম্ভবত সেকারণেই মানবী বলছিলেন, আম আমলে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আরও খুশি হতাম।
[আরও পড়ুন: হাতিয়ার মাস্কের মন্তব্য, ‘টুল কিট গ্যাং’কে একহাত নিল বিজেপি]
আসলে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, স্বাধীন এবং ভিন্ন যৌন চেতনায় বিশ্বাসীদের খুব একটা ভাল চোখে দেখেন না তাঁরা। মানবী মুখোপাধ্যায়ও সম্ভবত সেকারণেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বাম আমলে। তবে সেই ট্যাবু এখন অনেকটা কেটেছে। কয়েক বছর আগে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে গৌরব ঘোষ নামের একজন সমকামীকে প্রার্থী করেছিল বামেরা। তারপর থেকে চিন্তাভাবনায় আরও আধুনিক হতে শুরু করেছে বামেরা। মানবীর আশা, সুচেতনাকে (পড়ুন সুচেতনকে) হয়তো আর তাঁর মতো হেনস্তার শিকার হতে হবে না।