অরূপ বসাক, মালবাজার: পাহাড়, নদী আর সবুজ প্রকৃতি। তার মাঝে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে চান? রোমাঞ্চে ভরপুর ছুটি কাটাতে চান? তবে আপনার ঠিকানা হতেই পারে কালিম্পংয়ের চুইখিম। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল এখানকার বহুপ্রতীক্ষিত প্যারাগ্লাইডিং পরিষেবা।
কালিম্পং জেলার এই ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম এতদিন পর্যটকদের কাছে শান্ত প্রকৃতির খোঁজে পছন্দের গন্তব্য ছিল। এবার সেই চুইখিমে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য যোগ হলো নতুন আকর্ষণ প্যারাগ্লাইডিং। চুইখিম ভিলেজ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে এই প্রকল্প চালু হয়েছে, যার উদ্দেশ্য পর্যটনকে ঘিরে স্থানীয় জীবিকা ও অর্থনীতিকে আরও সক্রিয় ও আত্মনির্ভর করে তোলা। শুক্রবার এই পরিষেবার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কালিম্পংয়ের বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা, জিটিএ-র স্থানীয় সভাসদ সঞ্চাবির সুব্বা, জিটিএ পর্যটন বিভাগের ফিল্ড ডিরেক্টর দাওয়া শেরপা, এবং পাবরিংটার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রবিন সুব্বা।
প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করেন প্রশিক্ষিত পাইলট রূপক অধিকারী। পর্যটকদের মধ্যে প্রথম উড়াল দেন গরুবাথানের বাসিন্দা হায়দার আলি। প্যারাগ্লাইডিং পরিষেবার রুট সম্পর্কে স্থানীয় জিটিএ সভাসদ সঞ্চাবির সুব্বা জানান,এই গ্রামের লিম্বু দাড়া থেকে প্যারাগ্লাইডিংয়ের টেক-অফ করা হবে। ১৫-২০ মিনিট আকাশে ওড়ার পর পর্যটকরা ল্যান্ড করবেন লিশ নদীর ধারে সবুজ মাঠে। পুরোটা সময় নিরাপত্তা ও রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ। চুইখিম ভিলেজ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি হোম খাওয়াস জানান,মোট চারজন প্রশিক্ষিত পাইলট আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। প্রতিটি ফ্লাইটের খরচ মাত্র ৩,০০০ টাকা, যা দেশের অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস গন্তব্যের সঙ্গে তুলনীয়। আমাদের লক্ষ্য পর্যটকদের একদিকে রোমাঞ্চ দিতে, অন্যদিকে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।”
এতদিন কালিম্পং জেলার ডেলো পাহাড়ই ছিল প্যারাগ্লাইডিংয়ের একমাত্র জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে চুইখিম এখন সেই একচেটিয়া অবস্থানে ভাগ বসাতে প্রস্তুত। প্রকৃতি, নিরাপত্তা, এবং অ্যাডভেঞ্চার-তিনের মেলবন্ধনে চুইখিম হয়ে উঠছে নতুন আকর্ষণ। আলিপুরদুয়ার থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নিরলিপ্ত সাহা ও তাঁর স্ত্রী কাব্যশ্রী সাহা বলেন, "এত সুন্দর জায়গা আগে দেখিনি। আজ শুধু দেখে গেলাম, কাল প্যারাগ্লাইডিং করবো। এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও যথাযথ।"
জিটিএ পর্যটন বিভাগের ফিল্ড ডিরেক্টর দাওয়া শেরপা বলেন, "পাহাড়ি প্রকৃতির মাঝে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সুবিধা পর্যটকদের খুব আকর্ষণ করে। আশা করছি শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গ থেকেও বহু পর্যটক এখানে আসবেন। এতে গ্রামীণ পর্যটনের বিকাশ হবে, স্থানীয় মানুষ উপকৃত হবেন।" চুইখিমে প্যারাগ্লাইডিং চালুর মাধ্যমে এই গ্রাম শুধু একটি নতুন অ্যাডভেঞ্চার স্পট হিসেবেই নয়, বরং গ্রামীণ পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করলো। আগামিদিনে আরও বেশি পর্যটক এই অসাধারণ অভিজ্ঞতার টানে এখানে ছুটে আসবেন, এটাই প্রত্যাশা স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্যোক্তাদের।
