বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে কে না চায়! আর সেই কারণে বারবার মন ছুটে যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। সবার মুখে মুখে ফেরে টাইগার হিলের কথা। কিন্তু জানেন পাহাড়ে এমন বহু জায়গা রয়েছে যেখানে দাঁড়িয়ে মনপ্রাণ ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন সম্ভব! কিন্তু সেই সমস্ত জায়গার নাম এখনও অজানা পর্যটকদের কাছে। যার মধ্যে রয়েছে কালিম্পং জেলার পাবং গ্রাম। উৎসবের ছুটিতে পর্যটকদের গন্তব্য হোক পাখিদের এই ভুবনে।
পাইন, ওক জঙ্গলে ভরা সবুজ পরিবেশ। চারদিক পাহাড় ঘেরা ছোট্ট শান্ত জনপদ। এখানে ঘরে বসে নজরে কাড়বে আকাশের নীল ক্যানভাসে তুষারাবৃত 'ঘুমন্ত বুদ্ধ' অর্থাৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এছাড়াও ঝান্ডি দাড়া ভিউপয়েন্টে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা দেখে মন ফিদা হবেই হবে! এর সঙ্গেই রয়েছে বিভিন্ন পাখির কলতান।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ ফুট উঁচু! পাহাড়ের ঢালে এই পাবং গ্রাম। নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে ঘেরা ওই জনপদ বার্ড ওয়াচারদের স্বর্গরাজ্য। এখানে নীল আকাশে ডানা মেলে ঘুরে বেড়ায় রোলার, মিনিভেট, দ্য সানবার্ড, সোয়ালো... আরও কত প্রজাতির পাখি। ওই পাখিদের কলতান, বয়ে চলা জলপ্রপাতের শব্দে সবসময় মুখরিত থাকে এই গ্রাম। যা একেবারে নৈসর্গিক মুগ্ধতা ডেকে আনবেই!
কোথায় এই প্রজাপতি ও পাহাড়ে ঘেরা গ্রাম?
কালিম্পং শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে ৭০ কিলোমিটার। অফবিট এই গ্রামে ঢুকলেই দেখতে পাবেন রকমারি প্রজাপতি, পাহাড়ি ফুল! যা মুগ্ধ করবে আপনাকে। কালিম্পং থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থিত। তাই সমতল ভ্যাপসা গরমে পুড়লেও এখানে পা রাখলে হিমের পরশে শিহরিত হবে মন-প্রাণ। ক্লান্তি জুড়াতে পাবংয়ের সত্য়িই বিকল্প নেই। আর যদি অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তাহলে তো কথাই নেই! পর্যটকরা পেয়ে যাবেন ট্রেকিং এবং হাইকিংয়ের সুযোগ।
এখান থেকে নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে যাওয়ার জন্য একটি রুট রয়েছে। কয়েক কিলোমিটার ট্রেক করতে হবে। এই পথে হেঁটে গেলে রকমারি পাখি দেখারও সুযোগ পাবেন। ইচ্ছে হলে পাবংয়ে থেকে ঘুরে দেখতে পারবেন লাভা, ললেগাও, রিশপ, চারখোল পর্যটনকেন্দ্র। পাবং থেকে লোলেগাঁওয়ের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। চারখোল ৪ কিলোমিটার।
পর্যটন কেন্দ্র ঘেরা জনপদ। এখানে কৃষিকাজ জৈব পদ্ধতিতে হয়। হেঁটে পাকদণ্ডী বেয়ে দিনভর ঘুরে বেড়াতে পারবেন। কাছেই ঝান্ডি দাড়া ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি, বাগরাকোট, চুইখিম, চারখোল হয়ে পাবংয়ে পৌঁছাতে ৭০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হবে। রয়েছে ভাড়াগাড়ি। এক্ষেত্রে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যেই খরচ পড়বে। পাহাড় ঘেরা এই অফবিট গ্রামে পৌঁছাতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। অন্য রুটেও যেতে পারেন। সেটা শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে পাবং। দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। কালিম্পং থেকে গাড়ি ভাড়া নিতে হবে। পাবংয়ে থাকার জন্য পেয়ে যাবেন হোমস্টে। থাকা- খাওয়া নিয়ে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি হোমস্টে পরিবেশ বান্ধব। স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষিকাজের পাশাপাশি ওই হোমস্টেগুলো খুলেছেন। ফলে দারুণ খাওয়া দাওয়ার সঙ্গে একেবারে সুন্দর পরিবেশ চাক্ষুষ করার সুযোগ।
