বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর ‘মিশ্র হেরিটেজ’ তালিকায় জায়গা করে নেয় উত্তর সিকিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান। এবার ওই উদ্যানকে 'ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজানশন অব নেচার অ্যান্ড নেচারাল রিসোর্স' (আইইউসিএন) সংস্থা দিল পরিচালনা ও সুরক্ষায় বিশ্বের সেরা এলাকার স্বীকৃতি।
২০১৪ সালে তৈরি আইইউসিএন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আউটলুক বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান ও সেটির সংরক্ষণের মূল্যায়ণ করে। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরিচালিত এই মূল্যায়নে প্রতিটি স্থানের বাস্তুতন্ত্র, জৈব বৈচিত্র্য, সংরক্ষণ, বর্তমান অবস্থা, সেখানকার সমস্যা, সুরক্ষা ও পরিচালন ব্যবস্থার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সম্প্রতি প্রকাশিত আইইউসিএন-এর রিপোর্টে কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা বলে জানানো হয়েছে। সিকিমের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী পিন্টসো নামগিয়াল লেপচা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই স্বীকৃতি রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটি সংরক্ষণের প্রতি সিকিমের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনরায় নিশ্চিত করে, যেখানে প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি মিলেমিশে সহাবস্থান করে। বন কর্মকর্তা এবং কর্মীদের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানটি জাতীয় স্বীকৃতি পায় ১৯৭৭ সালে। শুরুতে প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে তার সীমা ছিল। পরবর্তীকালে এর আয়তন বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৮৪ বর্গ কিলোমিটার হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং আশপাশের শৃঙ্গ এই উদ্যানের নানা জায়গা থেকে দেখা যায় বলে পর্যটনের দিক থেকে এই স্থান গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু প্রকৃতি নয়। এই জঙ্গলের সঙ্গে মিশে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংস্কৃতিও। তাঁদের ভাবনা, বিশ্বাস, ধর্ম।
২০১৬ সালে ইউনেস্কোর তরফে ‘মিশ্র হেরিটেজ’ স্বীকৃতি পায় উদ্যানটি। প্রথমবার ভারতের কোনও স্থান ইউনেস্কোর ‘মিশ্র হেরিটেজ’ তালিকায় জায়গা করে নেয়। জাতীয় উদ্যানের এলাকায় রয়েছে ১৮টি হিমবাহ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জেমু। রয়েছে ৭৩টি বরফগলা জলের হ্রদ, যার মধ্যে ১৮টি অবস্থান অনেক উঁচুতে। এখানেই বাস করে রেড পান্ডা, টিবেটিয়ান গ্যাজেল, টিবেটিয়ান ভাল্লুক-সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী। এই উদ্যান পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্যও। এখানে দেখা মেলে রকমারি রডোডেনড্রন ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের। জঙ্গলে আনাচকানাচে রয়েছে রকমারি ভেষজ উদ্ভিদ। হিমালয়ের জীববৈচিত্র্যের 'হটস্পটের' মধ্যে পড়ে এটি। আলপাইন বাস্তুতন্ত্রের এক অতুলনীয় পরিসর রয়েছে।
