সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্যপ্রদেশ ভারতের হৃদপিণ্ড। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ভ্রমণ পিয়াসী মানুষেরা সুযোগ পেলেই এখানে দৌড়ে আসেন। এখানকার দু'টি উল্লেখযোগ্য সাইট সিয়িং ডেসটিনেশন হল কানহা আর বান্ধবগড়ের দুর্ভেদ্য জঙ্গল ও প্রাচীন স্থাপত্য। অবশ্য শুধু বাঘ, চিতল বা সবুজে মোড়া প্রকৃতির মধ্যেই তা শেষ নয়। এখানকার মাটির পরতে পরতে মিশে আছে পৌরাণিক গল্প, লোকবিশ্বাস ও প্রাচীন উপকথা। বনবাসকালে ভগবান শ্রীরামের পদধূলি পড়েছিল এই পুণ্যভূমিতে। তাই, এই দু'টি জাতীয় উদ্যান অ্যাডভেঞ্চার ও আধ্যাত্মিকতার এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে। জঙ্গলের অ্যাডভেঞ্চার উপভোগের পাশাপাশি টাইমমেশিনে চড়ে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ থাকবে রামায়ণের যুগেও।
বান্ধবগড়
'বান্ধব' মানে ভাই এবং 'গড়' মানে দুর্গ। কিংবদন্তি অনুসারে, ভগবান রাম যখন রাবণকে পরাজিত করে অযোধ্যায় ফিরছিলেন, তখন তিনি লক্ষণকে এই অঞ্চলটি উপহার দেন। জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত একটি দুর্গের মধ্যে থেকে লক্ষণ চারপাশে নজরদারি চালাতে থাকেন। এই দুর্গটি এখনও রয়েছে। যদিও তা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত। এই দুর্গটি বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এখানকার 'বাড়ি গুম্ফা' ছিল প্রাচীনকালে মধ্যযুগীয় সেনাদের আবাসস্থল। সেই গুহাগুলি ঘিরেই এখন বাঘেদের ডেরা। এছাড়াও জঙ্গলে চিতল, শম্বর, নীলগাই, চৌশিঙা প্রভৃতি বন্যপ্রাণির দেখা পাওয়া যায়। রয়েছে আড়াইশো প্রজাতির পাখি। এই জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে প্রায় ৬৫ ফুট লম্বা ভগবান বিষ্ণুর শায়িত মূর্তি। আর এই 'শেষ শয্যা' মূর্তির পায়ের নিচ দিয়েই বয়ে গিয়েছে জলধারা।
কীভাবে যাবেন?
বান্ধবগড় মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। জবলপুর থেকে থেকে আপনি বিমান বা রেলপথে বান্ধবগড় যেতে পারেন। জবলপুর থেকে বান্ধবগড়ের দূরত্ব প্রায় ১৬৫ কিমি। বিমান পথে যেতে চাইলে খাজুরাহো (২৩০ কিমি) বা উমারিয়া (৩৫ কিমি) আদর্শ স্থান। এই শহরগুলি থেকে পার্কের প্রধান প্রবেশ পথ টালা গেটে যাওয়ার বাস ও ট্যাক্সি পাওয়া যায়।
কানহা
রামায়ণ অনুসারে, অন্ধ পিতামাতাকে কাঁধে নিয়ে শ্রাবণ কুমার নামে তাঁদের পুত্র কাশী গিয়েছিল। জঙ্গলের মধ্যে পুকুর থেকে জল আনতে গিয়ে সেই পুত্র রাজা দশরথের তীরে বিদ্ধ হন। বন্যপ্রাণি ভেবে রাজা দশরথ শ্রাবণ কুমারকে তীর ছুড়ে হত্যা করেন। অন্ধ বাবা-মা দশরথকে অভিশাপ দেন। এর ফলে রাম বনবাসে গেলে রাজা দশরথ পুত্রশোকে মারা যান।
কানহা মূলত শাল জঙ্গল। এখানে একাধিক পাহাড় ও মালভূমি রয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে দুটি নদী। বানজার ও হালন। কপাল মন্দ না হলে হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গল সাফারিতে বাঘের দেখাও মিলতে পারে। কানহা মেডোজ, শ্রবণ-তাল, বামনি দাদার জায়গাগুলি না দেখে ভুলেও ফিরবেন না যেন! কয়েকশো প্রজাতির সরীসৃপ ও পাখি এখানে দেখা যায়।
কীভাবে যাবেন?
কানহা ন্যাশনাল পার্ক মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর হল জবলপুর(১৬০ কিমি), রায়পুর(২৫০ কিমি) এবং নাগপুর (৩০০ কিমি)। এই শহরগুলি থেকে ট্যাক্সি বা বাসে করে পার্কে যাওয়া যায়।
