সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: একসময় নীলকর সাহেবদের সেই বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। অন্যান্য ইংরেজরাও যেতেন সেখানে। জমিদার বাড়িতে তখন ছিল আলাদা রোশনাই। বিলাসবহুল আসবাব, ঝাড়লণ্ঠন ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি বাড়ির দেওয়ালের রং ছিল টকটকে লাল। সাহেবদের ব্যবহার করা বিলাসবহুল জিনিসপত্র ওই বাড়িতে সাজানো থাকত। কৃষ্ণনগরের ওই জমিদারবাড়ির প্রতাপ ছড়িয়েছিল বহু দূর পর্যন্ত। ব্রিটিশ শাসন এখন অতীত। সেই জমিদারিপ্রথাও বিলীন হয়েছে অনেক কাল হল। বাড়ির সেই লাল রঙও এখন অনেকটাই ফিকে। তবু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রাসাদ। এখন ওই বাড়িই পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম বিষয়। শুধু বাড়ি কেন? বিশাল বাগানও নজর কাড়ে সাধারণ মানুষ ও আগত পর্যটকদের।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর বরাবরই ইংরেজ শাসনের সময় থেকে চর্চায়। নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও আন্দোলনের ইতিহাসও রয়েছে। সেই কৃষ্ণনগরের চর শম্ভুনগর গ্রামে আজও আলোচনায় বিশাল আকারের শতাব্দী প্রাচীন জমিদার বাড়ি। জানা যায়, কয়েক যুগ আগে ব্রিটিশ রাজত্বে ওই গ্রামে বসবাস করতেন মাত্র ২০০টি পরিবার। সেসময় গোবর্ধন আগরওয়াল নামে এক জমিদার তৈরি করেছিলেন এই বাড়ি। গ্রামের চেহারা এখন বদলে গিয়েছে। কয়েক হাজার পরিবারের বাস। এলাকার প্রবীণদের কথায় জানা যায়, কথিত আছে নীলকর সাহেবরা এই আবাসনে যাতায়াত করতেন। পরে জমিদারি চলে যাওয়ায় ওই বাড়িও বিক্রি হয়ে যায় বলে খবর।
বাড়ির একপাশের অংশের রং উঠে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র
পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই আবাসনে যাতায়াত করতেন সরকারি আধিকারিকরাও। কিন্তু পরে কাউকে আর দেখা যায় না। বিলাসবহুল আবাসনটির কিছু অংশ এখন ভগ্নদশা। তবে পর্যটকদের কাছে এই বাড়ির আকর্ষণ অনেকটাই বাড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের আঁকাবাঁকা পথের চারপাশে রয়েছে খেজুরগাছ, তালগাছ-সহ প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য। পাশেই বয়ে যাচ্ছে জলঙ্গি নদী। পথ পেরিয়ে আবাসনে ঢুকলেই দেখা যাবে দু'পাশে রয়েছে রানি ভিক্টোরিয়ার আবক্ষ মূর্তি। ওই বাড়ির বাগানে রয়েছে ছোটবড় অনেক গাছ। বাগানের মধ্যেও রয়েছে বাহারি ফুলের গাছ। বাগানের গাছে রয়েছে অসংখ্য পাখির বাস। বাড়ির মধ্যে প্রচুর সংখ্যায় ব্রিটিশ আমলের জিনিসপত্র এখনও রয়েছে বলে খবর। এই বাড়িটি এলাকায় গ্রাম বাংলার ভিক্টোরিয়ার বাড়ি হিসেবেও পরিচিত বলে শোনা গিয়েছে।
বাগানে রানি ভিক্টোরিয়ার সেই মূর্তি। নিজস্ব চিত্র
শীতের সময় বহু পর্যটক এখানে হাজির হন। বছরের অন্যান্য সময়েও প্রায় প্রতিদিন পর্যটকদের উপস্থিতি এখানে দেখা যায় বলে খবর। গ্রামের গৃহবধূ পিঙ্কি পরামানিক বিশ্বাস বলেন, অনেক ইতিহাস এখানে জড়িয়ে রয়েছে। পর্যটকরা এসে গ্রামের মানুষের থেকেই সেসব গল্প শোনেন। গ্রামের অপর বাসিন্দা শীতল ঘোষ বলেন, যারা এই ইতিহাসপ্রসিদ্ধ গ্রামে আসতে চান, তারা আসুন এবং নিজের চোখে দেখে যান। এই বাড়িটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত করা হোক। প্রশাসনের তরফ থেকে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সেই দাবিও উঠেছে।
