সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একপাশে মাঠাবুরু। আরেক পাশে পাখিপাহাড়। একটু এগোলেই অযোধ্যা পাহাড়ের টানা লম্বা রেঞ্জ। আর সেখানেই গাছ-গাছালির ঠাসাঠাসিতে গাছবাড়ি ছুঁয়ে টেন্ট ট্যুরিজম। ট্রি ট্যুরিজমের পর অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের আরেক ঠিকানা বনদপ্তরের। যা পুজোর আগেই দ্বার খুলছে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির মাঠায়। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন,"মাঠা বনাঞ্চলে আমাদের গাছবাড়ি রয়েছে। এই ট্রি হাউসের বুকিং হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে। এরপর আমরা মাঠায় টেন্ট ট্যুরিজম চালু করছি। আশা করছি পুজোর আগেই এই পর্যটন প্রকল্পের দরজা খুলে দিতে পারব। সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।"
বনদপ্তরের স্টেট প্ল্যানের প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা অর্থে গাছবাড়ির পাশেই চারটি সুইট টেন্ট বসিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। মাঠা বনাঞ্চলের তত্ত্বাবধানে এই কাজ হয়েছে প্রায় মাস ছয়েক আগেই। ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত এই পর্যটন প্রকল্পকে আরও সাজিয়ে গুছিয়ে পর্যটকদেরকে একেবারে মাটির ঘ্রাণ দিতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। যা পুজোর আগেই রূপায়ণ করে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে উপহার দেবে বনদপ্তর।
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে ‘লং উইকেন্ড’! সময় কাটানোর কাটানোর সেরা ৫ সৈকত]
লাক্সারি এই টেন্টে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকছে। সাজানো খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল। সেই সঙ্গে একেবারে সুসজ্জিত টয়লেট। যা মিলবে একেবারে হাতের নাগালের মধ্যেই। সেইভাবেই প্রস্তাবিত রেট চার্ট পুরুলিয়া বনবিভাগ অনুমোদনের জন্য অরণ্যভবনে পাঠিয়েছে। বনদপ্তর চাইছে, মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে মাঠার এই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের স্বাদ দিতে। পুরুলিয়ায় যেভাবে পরিবেশ বান্ধব বেসরকারি পর্যটন প্রকল্পগুলির রেট আকাশছোঁয়া। তাতে সাধারণ পর্যটকরা একেবারে হিমশিম খাচ্ছেন। সৌন্দর্যরানি পুরুলিয়াকে যাতে সর্বস্তরে তুলে ধরা যায় সেই কথা মাথায় রেখেই বনদপ্তরের এই নয়া মাঠা পর্যটন প্রকল্প।
সুইস টেন্ট ছাড়াও সাধারণ ক্যাম্পিং টেন্টও এখানে থাকবে। সেগুলি অত্যাধুনিক না হলেও পর্যটকরা অনায়াসে সেখানে অ্যাডভেঞ্চারের মজা নিতে পারবেন। তবে শুধু পর্যটকরা নন। পর্বতারোহীরাও ওই টেন্টে রাত কাটিয়ে মাঠাবুরুতে ট্রেকিং করতে পারবেন। এইরকম সাধারণ ক্যাম্পিং ট্যান্ট বসবে মোট ৩০টি। শীতের মরশুমে পর্বতারোহীদের জন্য এই মাঠা বনাঞ্চলে মোট ১৫ টি টেন্ট বসানো যায়। পর্বতারোহীরা নিজেদের মতো করে তাঁবু ফেলে। এবার পুজোর আগে থেকে এই টেন্ট ট্যুরিজমে ৩০ টি সাধারণ ক্যাম্পিং টেন্টের সুবিধা মিলবে।
রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে পুরুলিয়া প্রথম সারিতে থাকলেও অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত থাকার জায়গা নেই। পুজোর সময় থেকে রীতিমতো হাউসফুল হয়ে যায়। এই কথা মাথায় রেখেই পুরুলিয়াবনবিভাগ মাঠা বনাঞ্চলের এই পর্যটন প্রকল্পে সুইট ও ক্যাম্পিং টেন্ট ছাড়াও মিটিং হলকেও ট্রেকারদের থাকার ব্যবস্থা হিসাবে সাজিয়ে তোলা হবে। যাতে এই পর্যটন প্রকল্পে প্রায় ১০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা যায়। এই টেন্ট ট্যুরিজমকে একটি প্যাকেজের আওতায় আনছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। পর্যটকদের পাশাপাশি যাতে পর্বতারোহীরা ট্রেকিং করতে এসে সবরকম সুবিধা পান তারই পরিকল্পনা নিয়েছে বনদপ্তর। অর্থাৎ প্রকৃতির কোলে থেকেই একেবারে পরিবেশ বান্ধব পর্যটনে মাটির ঘ্রান মিলবে। যৌথ বন পরিচালন কমিটির দ্বারা খাবারে মিলবে লোকাল ডিস। অর্থাৎ মানভুঁইয়া থালিতে এই পর্যটন প্রকল্পে আপ্যায়ন করবে বনদপ্তর। এই প্রকল্পও নিয়ন্ত্রিত হবে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে। তাদের ওয়েবসাইট থেকেই মিলবে বুকিং।