সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে জুড়ে গেল পর্যটনের জেলা পুরুলিয়াও! বড়দিনের প্রাক্কালে অর্থাৎ প্রায় সপ্তাহখানেক আগেই জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় একেবারে ঠাসা পর্যটক। বড়দিনে এই জেলার হোটেল, লজ, কটেজ, রিসোর্ট, পর্যটক আবাস সবই হাউসফুল। তাই এই বিপুলসংখ্যক পর্যটককে পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী গির্জাগুলিতে টানতে রাজ্য পর্যটন বিভাগ কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে পুরুলিয়াকেও জুড়ে দিয়েছে।
অর্থাৎ রাজ্য পর্যটন বিভাগের একেবারে এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গল ট্যাগ লাইনে পুরুলিয়ার জিইএল ও অ্যাসেনশন চার্চকে আলোকমালায় সাজিয়ে তুলেছে। এই জেলা জুড়ে যেসব গির্জা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন এই দুটি। সমগ্র জেলার মধ্যে এই দুটি গির্জাতেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। এই দুটি গির্জাকে ঘিরে রয়েছে ইতিহাসও। ফলে বড়দিনের উৎসবে এই দুটি গির্জার মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলের এই জেলার হেরিটেজ ট্যুরিজমকে রাজ্য পর্যটন বিভাগ তুলে ধরতে চাইছে। বৃহস্পতিবার এই দুটি গির্জায় ক্রিসমাস সূচনার অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে ভার্চুয়ালি ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই জেলায় মূল অনুষ্ঠানটি হয় জিইএল চার্চে। ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, জেলাশাসক সুধীর কোন্থাম, পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি। জেলাশাসক বলেন, "জঙ্গলমহলের এই জেলাতেও দুটি ঐতিহ্যবাহী গির্জা রয়েছে। রাজ্য পর্যটন বিভাগ থেকে গির্জাগুলিকে আলোকমালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য গির্জা রয়েছে। এই জেলায় বড়দিন বা শীতের মরশুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন। তাই সেই সকল পর্যটকরা যাতে এই গির্জায় এসে আনন্দ নিতে পারেন। ইতিহাসকে জানতে পারেন সেই কারণেই ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে পুরুলিয়া জুড়েছে।"
বড়দিনে বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে পুলিশি ব্যবস্থাও থাকছে যথেষ্ট। পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, "জেলা জুড়ে যে সকল গির্জাগুলিতে ভিড় হয় সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যাতে এই উৎসব সুষ্ঠুভাবে পালন হয় সেটা আমরা দেখছি। পর্যটন কেন্দ্র ও সাইট সিয়িং গুলিতে যে সমস্ত পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ আছে সেগুলো যাতে আরও সক্রিয় হয় সেটা দেখা হচ্ছে। অযোধ্যা পাহাড়ে এবং পাহাড়ের নিচে পর্যটকদের যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয় সেই বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।"
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা বনমহলের এই জেলায় ব্যাপক হারে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। এই জেলায় যে তিনটি পর্যটন সার্কিট রয়েছে অযোধ্যা, গড় পঞ্চকোট এবং দক্ষিণ সার্কিট। ওই সার্কিটের যে সকল পর্যটন কেন্দ্র আছে সবগুলোতেই ভিড় উপচে পড়ে বড়দিনের আগে থেকে নতুন ইংরাজি বছর। তবে এই জেলার পর্যটন মরশুম শুরু হয়ে যায় পুজোর আগে থেকে একেবারে দোল-হোলি পর্যন্ত। তবে কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে পুরুলিয়ায় সারা বছর ধরেই পর্যটকদের ভিড়। তবে গত বছর এই জেলায় সেভাবে পর্যটকদের ভিড় হয়নি। এবার কিন্তু সেই ছবি নেই। পুজোর আগে থেকেই ভিড় চোখে পড়ার মত। আর বড়দিনের আগে সরকারি-বেসরকারি পর্যটন পরিকাঠামোতে কার্যত 'ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই' অবস্থা। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এই আহবানে কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভাল চলবে একেবারে ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আর তাতে শামিল সেজেগুজে পুরুলিয়াও। অন্যান্য বছর এই ক্রিসমাস ফেস্টিভাল ২২ বা ২৩ শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়। এবার একটু এগিয়ে এসে একেবারে উৎসবে মাতোয়ারা পুরুলিয়া। তাই আলোকমালায় সেজে উঠেছে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, জেলা গ্রামোন্নয়ন সংস্থার ভবন, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তর। আজ শুক্রবার থেকে সেজে উঠবে জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকে জেলা পুলিশ অফিসও।
